কেন নুহাশের ডেডলাইন পত্রিকাতে ছাপা হওয়া খবরটি গুরুত্বপূর্ণ?
পৃথিবীতে ৭০০০ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আছে, যারা রেজিস্টার্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এর মধ্যে মাত্র ৬৩টি ফেস্টিভ্যাল, মানে মাত্র ০ দশিমক ৯ শতাংশ হচ্ছে অস্কার কোয়ালিফায়িং। অস্কার কোয়ালিফায়িং ফেস্টিভ্যাল মানে কী? মানে, এই ফেস্টিভ্যালে যদি কোনো ফিল্ম কম্পিটিশনে যেত, শুধু অংশগ্রহণ কিন্তু নয়, শুধুমাত্র যদি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়, তবে সেই ফিল্মটি অটোমেটিক্যালি অস্কার এর দৌড়ে চলে আসবে। তার মানে ধরে নেওয়া হবে যে এই বছর সারা পৃথিবীতে যতগুলো শর্ট ফিল্ম হয়েছে, তাদের মধ্যে এই ফিল্মগুলো শ্রেষ্ঠ। এরপর এখন থেকে আস্তে আস্তে শর্টলিস্ট হতে হতে অস্কারের নমিনেশন আসে।
এখন এরকম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ হয় কি করে একটা ফিল্ম? সাধারণত এরকম বড় ফেস্টিভ্যালে গড়ে ৩০০০ করে শর্টফিল্ম জমা পরে। সেখান থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরি মিলিয়ে হয়তো ১০টা ফিল্ম কে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেওয়া হয়। তারমানে মাত্র ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ ফিল্ম এই সম্মান পায়। এখন একই সঙ্গে অস্কার কোয়ালিফাইং ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়ে, সিলেক্ট হয়ে পুরস্কার জেতার চান্স তাহলে গাণিতিক ভাবে দাঁড়ায় ০.৯% x ৩৩% = .০০২৯৭%। এই জন্য এই অস্বাভাবিক বাজি যারা জিতে নেয়, তাদের কে বলা হয় বেস্ট অফ দ্য বেস্ট। আমাদের ফিল্ম স্কুলে বলতো, যদি এক ধাক্কায় অনেক উপরে উঠতে চাও, তাহলে এই রাস্তায় হাঁটো! তারপর বিড়বিড় করে বলত, অবশ্য এই রাস্তায় গন্তব্যে পৌঁছানো খুবই কঠিন! আমাদের ইউনিভার্সিটিতেই ৫ ব্যাচ মিলিয়ে ১০০ জন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মাত্র ১ জনকে দেখেছিলাম এই রাস্তায় সাকসেসফুল হতে। আমরা অন্য ৯৯ জন এর ধারে কাছে যেতে পারিনি।
যাইহোক, এই অসম্ভব অর্জন, বাংলাদেশে বসে শর্ট ফিল্ম বানিয়ে, যে মানুষটি করেছেন, তার নাম হচ্ছে নুহাশ হুমায়ূন। তার সিনেমা ‘মশারি’ আটলান্টা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জুরি পুরস্কার জিতে বর্তমানে অস্কারের দৌড়ে আছে। এর পাশাপাশি তাকে অ্যানোনিমাস কন্টেন্ট প্রোডাকশন কোম্পানি এবং সিএএ এজেন্সি সাইন করেছে। এর মানে কী? প্রথমে এজেন্সি এর কথায় আসি। পশ্চিমা দেশে আপনি যদি ক্রিয়েটিভ লাইনে উচ্চ পর্যায়ে কাজ পেতে চান তাহলে আপনার একজন এজেন্ট বা ম্যানেজার লাগবে। তাদের কাজই হচ্ছে আপনার জন্য কাজ খুঁজে আনা। কারন আপনার ফি এর ১০-১৫ শতাংশ তারা পাবে। আপনি যত কাজ পাবেন তাদের লাভ তত। হলিউডে কোন বড় কাজ এজেন্ট বা ম্যানেজার ছাড়া হয় না। কেউ কথাই বলবেনা আপনার সঙ্গে। তো এই এজেন্সি গুলোর মধ্যে সিএএ হচ্ছে সবচেয়ে বড় এজেন্সি গুলোর মধ্যে একটা। এরা এতই বড় যে সরাসরি আপনি এদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। মানে তারা তখনি আপনার কাছে আসবে যখন তাদের কোনো বর্তমান ক্লায়েন্ট আপনাকে তাদের কাছে রেফার করে। নুহাশ হুমায়ুন কে যিনি রিপ্রেজেন্ট করছেন, তিনি সরাসরি কাকে রিপ্রেজেন্ট করে জানেন? অরিজিন্যাল স্পাইডার-ম্যান ট্রিলজি, ডক্টর স্ট্রেঞ্জ মাল্টিভার্স এর নির্দেশক স্যাম রাইমি কে! তারমানে এই মুহূর্তে স্যাম রাইমির যেই রিসোর্স, আমাদের নুহাশের একই রিসোর্স। ব্যাপারটা কি কল্পনা করতে পারছেন? ব্যাপারটা কেউ ভেরিফাই করতে চাইলে আইএমডিবি প্রো একাউন্টে দেখে নিতে পারেন।
এবং এই অভাবনীয় রিসোর্সের সদয় ব্যবহার যে এখনই শুরু হয়ে গেছে তার প্রমাণটাকি জানেন? এনোনিমাস কন্টেন্ট, যারা কি না মি. রোবট, ট্রু ডিটেকটিভ এর মত সিরিয়ালের পেছনের প্রোডাকশন কোম্পানি, তারা নুহাশ কে সাইন করেছে। এর মানে কি? তারা নুহাশের নেক্সট প্রজেক্ট প্রডিউস করতে চাচ্ছে। কেন করতে চাচ্ছে তারা? কারন তারা দেখেছে, নুহাশ বাংলাদেশে বসে, একটি হাই কনসেপ্ট জন্রের সিনেমা বানিয়েছে যা বাণিজ্যিক ভাবে সফল হবার ক্ষমতা রাখে, পাশাপাশি আর্টিস্টিক ভ্যালু ক্যারি করে। হলিউড জুড়ে এখন চলছে ডাইভার্স কন্টেন্ট এর জয় জয়কার। আজকে কোরিয়ান ফিল্মমেকাররা, মেক্সিকান ফিল্মমেকাররা যা করছে, তা আগামীতে নুহাশ করতে পারবে সেটা ধারণা করেই, এত বড় প্রতিষ্ঠান তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এবং এই জন্যই, হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় এন্টারটেইনমেন্ট এর পত্রিকা, ডেডলাইন নুহাশ কে নিয়ে নিউজ করেছে। এখানে উল্লেখ করা ভালো, নুহাশের সঙ্গে অন্যান্য বিজয়ীদের নিয়ে কিন্তু এখনো এমন রিপোর্ট আসেনি বা তারা এমন সুযোগ এখনো পায়নি। আমাদের নুহাশ পেয়েছে। এটা যে কি বিশাল একটা ব্যাপার, আমি ভাষায় বোঝাতে পারছি না। প্রত্যেক ফিল্মফেস্টিভ্যাল বা স্ক্রিনরাইটিং কম্পিটিশনের ওয়েবসাইটে বড় করে দেয়, যখন কেউ এরকম চুক্তিতে সাইন করে। কারণ এর মানে হচ্ছে এখন এই মানুষটার কাছে আমরা নিয়মিত ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড কাজ পাব!
অস্কারের দৌড়ে থাকা একটা চমৎকার ঘটনা কিন্তু এর এফেক্ট সাময়িক। এজেন্সি আর প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে চুক্তি হওয়া মানে ভবিষ্যৎটা সুন্দর করে গুছিয়ে ফেলা। খুব কম মানুষই এই পর্যায়ে সেই সুযোগটা পায়।
আমার ক্ষমতা থাকলে আমি প্রত্যেক নিউজপেপারের প্রথম পাতায় এই খবরটা ছাপাতাম। আমার ক্ষমতা কম দেখে আমার ফেইসবুকে লিখে রাখলাম। আজ থেকে ১-২ বছর পর যখন নুহাশ মার্ভেলের কোন প্রজেক্টে ডিরেকশন দেবে, তখন যেন বলতে পারি, আমি তো আগেই বলছি! আমি কমেন্টে ডেডলাইনের রিপোর্টের পাশাপাশি অন্যান্য কিছু লিংক দিলাম। আগ্রহীরা নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন। আর সবশেষে নুহাশ, থ্যাংকস ফর ইন্সপায়ারিং মি ম্যান। আমি অধিক আগ্রহে তোমার পরবর্তী জাদু দেখার জন্য বসে থাকলাম। অনেক অনেক অনেক শুভকামনা।
এএম/এমএমএ/