হল মালিকদের দাবি পূরণে তথ্যমন্ত্রীর আশ্বাস
আধুনিক মানের সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্স নির্মাণ এবং সংস্কারের জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ প্রদান করবে সরকার। এতে হল মালিকদের ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হবে। ঋণ প্রদান ও বিনিয়োগ সক্রান্ত নানান বিষয়ে হল মালিকদের সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে হল মালিকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ (এমপি)।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সারাদেশ থেকে আগত হল মালিকদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ (এমপি)।
অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণলয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমীন, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সচিব মমিনুল হক জীবন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহা-ব্যবস্থাপক মাকসুদা বেগম, অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিএম আবু হাসান তালুকদার, হল মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাসসহ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় হলমালিক প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে-বিদেশি সিনেমা আমদানি, যৌথ প্রযোজনার সিনেমা সহজিকরণ, ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি, ব্যাংক নির্ধারিত সুদের হার পাঁচ শতাংশ থেকে আরও কমানো, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সুদের ধাপ নির্ধারণসহ হল মালিকদের সুবিধার্থে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
এ সময় সাধারণ হল মালিকরাও এই দাবিগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
অভিসার সিনেমা হলের মালিক শরফুদ্দিন ভূইয়া বর্তমান চলচ্চিত্র ও সিনেমা হলগুলোর অবস্থা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।
কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন,‘আমাদের সিনেমা হলগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিনেমা হলের শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না। আমাদের দেশে ভালো মানের সিনেমা খুব কম তৈরি হচ্ছে। তাই হল বাঁচিয়ে রাখতে বিদেশি সিনেমা আমদানি করা জরুরি। কম করে হলেও বছরে অন্তত্য ১০ থেকে ১২টি সিনেমা আমদানি করা হলে কর্মচারী নিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারব।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহা-ব্যবস্থাপক মাকসুদা বেগম বলেন, ‘ব্যাংকের মানুষদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা আপনাদের জন্যই কাজ করতে চাই। যে যে ছোট ছোট সমস্যাগুলো আছে সেগুলো অতিদ্রুত সমাধান হবে বলে আমি আশা করি। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদাণে সার্বিকভাবে সহোযোগিতা করবে এটা আমার বিশ্বাস।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি অনেকদিন থেকেই এমন একটি সভা করতে চেয়েছিলাম। আমরা মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়ে অনেকবার বসেছি। সেসব সভায় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রতিনিধিরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। আমি তাই হল মালিক প্রদর্শক সমিতির নেতাদের অনুরোধ করেছিলাম এমন একটি সভার জন্য। তবে তাদের সমস্যাগুলো আরও বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। সরকার বিশেষকরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে তা দ্রুত ব্যবহার হবে। এটি করা হয়েছে ২০২১ সালে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে হলগুলো বন্ধ ছিল। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় করোনা আমরা সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পেরেছি। ঈদ উপলক্ষে যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে তা কিন্তু মানুষ দেখছে। হলে সিনেমা দেখার আগ্রহ মানুষের আছে। আমাদের দেশের মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। স্টার সিনেপ্লেক্স এখন পাঁচটি থেকে ৫০টি করার পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। সিনেপ্লেক্সে লাভ যদি না হতো তাহলে ৫টি থেকে ৫০টি করার চিন্তা করত না তারা। মানুষ সিনেমা দেখছে বলেই বা লাভ হচ্ছে বলেই কিন্তু তারা তাদের শাখা বাড়াচ্ছে। তাই মানুষের রুচির সাথে সামঞ্জস্য রেখেই হলের পরিবর্তন করতে হবে। সিনেপ্লেক্স করলে মানুষ অবশ্যই সেখানে যাবে। প্রথমে কোটি লোন ছিল কিন্তু গতবছর আমরা সংশোধন করে দিয়েছি ১০ কোটি টাকা করে। আমি মনে করি এখন ভালো ছবি হচ্ছে। আজ থেকে ৫ বছর আগে যে পরিস্থিতি ছিল এখন কিন্তু তা নেই। সরকারি পক্ষ থেকে আমরা অনুদান দিচ্ছি। আগে অনুদান দেওয়া হতো শুধুমাত্র আর্টফিল্মে। এখন কিন্তু বেশিরভাগ বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদান দেওয়া হচ্ছে।’
বিদেশি ছবির আমদানি সম্পর্কে ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘সিনেমা আমদানি রপ্তানীকরণ এটা আমরা মন্ত্রণালয় থেকে আলোচনা করে যেভাবে আরও সহজ করা যায় এটা করে দেবো। যৌথ প্রযোজনার ছবির নীতিমালায় আমরা দেখবো ২০১৭সালে কি পরিবর্তন হয়েছে। যদি কোনো পরিবর্তন আপনাদের আগ্রহের বিপরীতে হয়ে থাকে সেটা পরিবর্তন করে দেবো। আমি মনে করি সীমিত আকারে বিদেশি ছবি আমদানিতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে সবাই একমত হতে হবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি, পরিচালক সমিতি কেউ দ্বিমত করে না। তবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কিছু রিজার্ভেশন আছে। তাই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাথে আপনারা কথা বলেন। আমিও তাদেরকে অনুরোধ করব যদি ১০/১২টা সিনেমা প্রতি বছর আসে তাতে আমাদের সিনেমা হলগুলোর জন্য ভালো হবে। আমাদের সিনেমা তো চলবেই।’
উল্লেখ্য, দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন প্রাণ সঞ্চারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে ১০০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের অনুরোধ জানায়। সে প্রেক্ষিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি পরিপত্রের মাধ্যমে সকল তফসিলভুক্ত ব্যাংক থেকে নতুন সিনেপ্লেক্স বা সিনেমা হল নির্মাণে সর্বোচ্চ ১০ কোটি এবং সংস্কারে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছে। দেশে মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতে ৫ শতাংশ ও এর বাইরের এলাকায় সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ৮ বছর মেয়াদী এ ঋণ সুবিধা রাখা হয়েছে।
এএম/এমএমএ/