মারা গিয়েছেন ব্রিটেনের বিখ্যাত সুরকার স্যার হ্যারিসন বার্টহুইসেল
অত্যন্ত প্রশংসিত ও খ্যাতিমান ব্রিটিশ সুরকার স্যার হ্যারিসন বার্টহুইসেল আজ ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার মারা গিয়েছেন ৮৭ বছর বয়সে। নিশ্চিত করেছেন তার প্রকাশক বুসি অ্যান্ড হকস ও এজেন্সি রেফিল্ড অ্যালাইড। তারা গভীর বেদনাবোধে ঘোষণা করেছেন, তিনি উইল্টশারের মিয়ারে নিজের বাড়িতে মারা গিয়েছেন।
তিনি সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন ১৯৭২ সালে তার অকেস্টার কাজ ‘দি ট্রায়াম্ফ অব টাইম’র জন্য।
মঞ্চনাটক-‘দি মাস্ক অব অরপিয়াস’, ‘গোয়োওয়েন’ ও ‘দি মাইনোটর’ নাটকগুলোতে তার অনবদ্য সুরের জন্য খ্যাতিমান।
সঙ্গীতপ্রিয়দের রাজকীয় সংগঠন ‘দি রয়্যাল ফিলহারমোনিক সোসাইটি’ তাকে বলেছে, ‘সত্যিকারের সঙ্গীতময় অতিকায় মূর্তি’।
তার বন্ধু ও সহযোগী এবং ইংলিশ ন্যাশনাল অপেরার সঙ্গীত পরিচালক মাটিন ব্রাবিন্স বিবিসি রেডিও ৪’র আজকের অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘স্যার হ্যারিসনের কাজের বিস্তারিত মাত্রা ও পরিমাণ অসাধারণ। তিনি সবকিছুই করেছেন একটি খিলানের মতো হয়ে থেকে সেটির মধ্যে নাটকীয় ভাব প্রকাশ করে। সেসব তার কাজের চরিত্রচিত্রণ এবং রং বসানোতেও আছে।’
তিনি একমত হয়েছেন, ‘জটিলতা ও ছাড় না দেওয়ার বোধ তার কাজগুলোকে বর্ণনা করতে ব্যবহার করতে হয়। তবে এসব কিছুই সব সময় শাসিত হয়েছে তার ব্যাপক মাত্রার অকৃত্রিম ও খাঁটি আকারে যোগাযোগের চেষ্টায়, যেটি সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি করেছেন।’
‘এর বাদেও তিনি বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছেন। আপনিও যদি তার সুর শোনেন, মনে হবে, এর দুর্নিবার শক্তি আছে।’
স্যার হ্যারিসনের ‘প্যানিক ফ্রম দি লাস্ট নাইট প্রম্প্রস’র মতো কাজের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এটিও মনে-প্রাণে যত্ন করে তৈরি করেছেন তিনি।’
‘প্যানিক’ নামে খ্যাত তার এই সুরের খন্ডটি সমসাময়িক সঙ্গীতের প্রথম কাজ হিসেবে একটি শেষ রাতের অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়েছিল। তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘জনগণের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা হ্যারিকে নেতিবাচক উপায়ে আক্রান্ত করেছিল।’
আরো বলেছেন, ‘তিনি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। যদিও বাইরের দিকে একজন বদমেজাজি ছিলেন। তারপরও একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন।’
তার সঙ্গীতগুলো ব্যবহার করা হয়েছে জীবদ্দশায় বড় উৎসবগুলোতে, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের সিরিজ কনসার্টে। এই কাজগুলোতে পরিচালক হিসেবে ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করা ড্যানিয়েল বারেনবয়িম ও স্যার সায়মন র্যাটেল।
তার সুবিখ্যাত, মাস্টারপিস-‘দি ট্রায়াম্ফ অব টাইম’ দি রয়্যাল ফিলহারমোনিক সোসাইটি’র মাধ্যমে ও তাদের সাহায্যে ‘দি রয়্যাল ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রা’য় ১৯৭২ সালে প্রথম উপস্থাপন করা হয়। কাজটির ভিত্তি হলো বেলজিয়ামের ফ্লেমিশ অঞ্চলের ফ্লেমিশ কাউন্টির ফ্লেমিশ ঘরানার একজন শিল্পীর একটি শিল্পকর্ম। তার নাম পিটার ব্রুগল।
‘দি রয়্যাল ফিলহারমোনিক সোসাইটি’ জানিয়েছে, তিনি তাদের পাঁচটি পুরস্কার জিতেছেন। তার সম্পকে বলেছে, ‘তার সঙ্গীত বিশ্বকে অংকুরিত করেছে। তিনি সুরের জগতে যে নোটগুলো লিখেছেন তার প্রতিটিতে ছিল শক্তি বা গতি এবং কার্যকারিতা। আগামী দশকগুলোতেও আমরা তার কাজ শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনব।’
লন্ডন সিম্ফোনি অর্কেস্টা লিখেছে, ‘আজকে ব্রিটেনের সবচেয়ে মহান সুরকারদের একজন হ্যারিসন বার্টহুইসেলের চলে যাওয়ার বেদনাদায়ক খবরটি শুনতে হলো। তিনি মারা গিয়েছেন।’
মানুষটি জন্মেছেন ল্যানকাশায়ারের অ্যাক্রিংটনে ১৯৩৪ সালে। তিনি কম্পোজিশনের ওপর লেখাপড়া করেছেন। বাঁশি নিয়ে পড়ালেখা করেছেন ‘দি রয়্যাল ম্যানচেস্টার কলেজ অব মিউজিক’-এ। এখানেই পিটার ম্যাক্সওয়েল ডেভিস, আলেকজেন্ডার গেয়ার, জন অর্ডন এবং এলগার হাওয়েথের মতো মানুষের বন্ধু হয়েছেন। নিজের ক্লারিনেটগুলো বিক্রি করে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বৃত্তি যোগাড় করেছেন। সেখানেই তাকে জোর করে কম্পোজিশনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েই তিনি ‘দি অপেরা পাঞ্চ অ্যান্ড জুডি’ লেখেন। এই কাজটি, ‘ভার্সেস ফর অনসাম্বলস’ ও ‘দি ট্রায়াম্ফ অব টাইম’ তাকে ব্রিটিশ সঙ্গীতের অন্যতম আলোতে পরিণত করেছে।
১৯৭৫ সালে তাকে লন্ডনের ‘দি রয়্যাল ন্যাশনাল থিয়েটার’র সঙ্গীত পরিচালকের পদ দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এখানে তিনি কাজ করেছেন। আটটি বছর ছিলেন।
১৯৮৮ সালে তাকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন তাদের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ২০০১ সালে তিনি লাভ করেন ‘দি কম্পানিয়ন অব অনার’ পদক।
স্যার হ্যারিসনের স্ত্রী ২০১২ সালে মারা গিয়েছেন। তার নাম শিলা ডাফ। তার তিনটি সন্তান ও ছয়টি নাতি-নাতনি আছে।
ওএস।