সিলেটের এমসি কলেজের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদের (৩০) ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। অপরদিকে, এমসি কলেজে বুধবার রাতে ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাবির টিএসসি থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে আবার টিএসসি এসে মিছিলটি শেষ হয়। এ সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা "রগকাটার রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না", "শিবিরের সন্ত্রাস রুখে দাও ছাত্রসমাজ", "সিলেটে রগ কাটে, প্রশাসন কী করে"- এমন নানা স্লোগান দেন।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের কাছে তথ্য পাচারের অভিযোগে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘর্ষ, আহত ২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশচন্দ্র রায় সাহস বলেন, "ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে ছাত্রলীগ গেস্টরুম-গণরুম করে মিছিল করতে বাধ্য করতো, এখন আর কেউ সেই সুযোগ পাবে না।" তিনি অভিযোগ করেন, সিলেটে এমসি কলেজের এক শিক্ষার্থী গণতান্ত্রিক পরিবেশের পক্ষে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে ছাত্রশিবির তাকে মারধর করেছে।
তিনি আরও বলেন, "তারা যৌক্তিক সমালোচনাকে গ্রহণ না করে বরং রগ কাটার মতো অপরাধ করছে। যখনই এই গুপ্ত সংগঠন অবাধে চলাচলের সুযোগ পায়, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে ট্রমার মধ্যে রাখে।"
ছাত্রদল শিবিরকে উদ্দেশ করে বলেন, "আপনাদের উচিৎ ছিল ৫ আগস্টের ঘটনার পর জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করা। কিন্তু আপনারা আধিপত্য বিস্তারের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আপনাদের প্রত্যাখ্যান করবে।"
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, "একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রদলের বহু নেতা জীবন দিয়েছেন, অনেকে গুম হয়েছেন। কিন্তু এখন একটি গুপ্ত সংগঠন সেই চেতনাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।"
ছাত্রদল নেতারা আরও বলেন, "মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে ইসলামি ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারের আড়ালে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও আহত করে।"
এদিকে, সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজে বুধবার রাতে সংঘটিত একটি ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, "এমসি কলেজে তিন দিনব্যাপী বইমেলা চলছিল, যেখানে ২৪-এর ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে শহিদ রুদ্র সেনের নামে ছাত্রশিবিরের একটি প্রকাশনা স্টল ছিল। সংগঠনের নেতাকর্মীরা সারাদিন এবং মধ্যরাত পর্যন্ত এ আয়োজন নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু কলেজে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় ছাত্রশিবিরের নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হচ্ছে।"
ছাত্রশিবির নেতারা জানান, "ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী এবং বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া কর্মীদের মধ্যে বিরোধ থেকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু কোনো পক্ষই ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অভিযোগ করেনি। তবু ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।"
তারা আরও বলেন, "যে ব্যক্তি আহত হয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং কলেজ হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল যে তিনি ছাত্রলীগকে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করতেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে বাকবিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষ হয় এবং দুজন আহত হন।"
ছাত্রশিবিরের নেতারা অভিযোগ করেন, "ছাত্রশিবিরের গঠনমূলক কর্মসূচি নিয়ে কিছু মহল আগে থেকেই বিরোধিতা করে আসছে। এখন রাজনৈতিক স্বার্থে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে। এমনকি সিলেটের একটি পীরতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, যারা আগে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল, তারাও ছাত্রশিবিরকে দোষী দেখিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।"
নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি জানান এবং যেসব গণমাধ্যম তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করেছে, তাদের প্রকৃত সত্য তুলে ধরার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে এমসি কলেজে মিজানুর রহমান রিয়াদের ওপর হামলা হয়। এই ঘটনার জেরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থেকে প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হচ্ছে।