অনিশ্চয়তায় পথে ‘রানা প্লাজা’
দীর্ঘ চার বছর সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকার পর মুক্তির অনুমতি পেয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’।
এই সিনেমার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় এবার নতুন করে আলোচনায় এলো সাভারের আলোচিত ঘটনা রানা প্লাজা ধ্বসের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ‘রানা প্লাজা’ সিনেমাটি। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছর অতিক্রম করলেও আজও মুক্তির অনুমতি পায়নি সিনেমাটি। এ নিয়েই চলছে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির অনুমতি পেলে ‘রানা প্লাজা’ কেন পাবে না? অনেকেই প্রতিবাদে সরবও হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা এস এ হক অলিক তার ফেসকুবে লেখেন, ‘শনিবার বিকেল’র পর ‘রানা প্লাজা’ ছবিটি কি অবস্থায় আছে জানতে ইচ্ছা হয়!’
সিনেমাটি মুক্তির দাবিতে অলিকের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেক নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীরা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে ধসে পড়েছিল ৯ তলা ভবনটি। এটি ছিল দেশের পোশাক শিল্পে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।
২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তুপ থেকে পোশাককর্মী রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে পরিচালক নজরুল ইসলাম খান নির্মাণ করেন ‘রানা প্লাজা’ সিনেমাটি। এতে রেশমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। তার বিপরীতে টিটু চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক।
দীর্ঘ প্রায় আট মাস সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকার পর হাইকোর্টের রায়ে ২০১৫ সালের ১১ জুলাই সিনেমাটি মুক্তির অনুমতি পায়। এরপর সিনেমার মুক্তির দিনক্ষণ ঠিক হয় একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর। তবে গার্মেন্টস মালিক লীগের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এই চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী ও সম্প্রচারে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে উচ্চ আদালত।
এরপর ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনী ও সম্প্রচারে উচ্চ আদালতের দেওয়া ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সিনেমাটি একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মুক্তির প্রস্তুতি নেয় সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালক। কিন্তু মুক্তির একদিন আগে ১০ সেপ্টেম্বর আবারো নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে এ সিনেমা।
২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ‘রানা প্লাজা’ সিনেমাটি প্রদর্শনের ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ সরকার। সরকারের তথ্য বিবরণীতে বলা হয় সেন্সর আপিল কমিটি কর্তৃক জনসম্মুখে প্রদর্শনের উপযোগী নয় বলে বিবেচিত হওয়ায় চলচ্চিত্রটি সেন্সর সনদবিহীন ঘোষণা করা হয়েছে।
অনিশ্চয়তা থাকা সিনেমাটি প্রসঙ্গে পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘রানা প্লাজা’ আমার অনেক সাধনার সিনেমা। আজও সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারলাম না। এই দুঃখ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। সিনেমাটি একটি ডিজাস্টারকে কেন্দ্র করে নির্মিত। কিন্তু সিনেমাটি এখন আমার জীবন ডিজাস্টার করে দিয়েছে। এরপর আরও দুটি সিনেমা নির্মাণ শুরু করলেও কাজ শেষ পর্যন্ত করা হয়নি। কারণ স্বপ্ন ভেঙে গেলে কাজে মন বসানো কঠিন।
সিনেমাটিতে নেতিবাচক কিছু নেই। বরং সিনেমাটির মধ্যে গার্মেন্টস মালিক-শ্রমিক আরও সচেতন হওয়ার সুযোগ খুঁজে পাবেন। সিনেমাটি মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।
এতে আরও অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, প্রয়াত অভিনেতা সাদেক বাচ্চু, কাবিলা, রেহানা জলি, শিরিন আলম, শিউলী আকতার, হাবিব খান প্রমুখ।
এএম/এমএমএ/