মুভি রিভিউ
রাত জাগা ফুল: জীবনের ভিন্নধর্মী উপস্থাপন
মীর সাব্বির অভিনীত ও পরিচালিত ‘রাত জাগা ফুল’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে বছরের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর। প্রথমবার চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন মীর সাব্বির। এটা নিঃসন্দেহে সুখবর। অভিনেতা হিসেবে তিনি বহুমাত্রিক, বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারেন অবলীলায়। নির্মাতা হিসেবে তিনি কেমন সিনেমা বানাবেন, কতটা নান্দনিক ও শৈল্পিক সিনেমা বানাবেন—অনেকের মতো খানিকটা কৌতূহল ছিল আমারও। দর্শকশ্রোতার কৌতূহল সিনেমাটি কি মেটাতে পারবে?
সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘রাত জাগা ফুল’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। ফোনালাপে ঐশী বলেছিলেন, ‘এই মীর সাব্বিরকে আপনি ইতোপূর্বে দেখেননি, চিনবেন না।’ ঐশীর কথা শুনে আমার আগ্রহ আরও বেড়েছিল। এজন্য ঔৎসুক্য হয়েই প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছি, বলা যায়, ‘রাত জাগা ফুল’ সিনেমাটা দেখেছি মুগ্ধ হয়েই। সাব্বিরের ফুলের সৌরভ অনেকের মতো আমাকেও উতলা করেছে, নতুন ভাবনা-চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে বলব, এই মীর সাব্বিরের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। প্রাণীদের সঙ্গে, বৃক্ষের সঙ্গে, বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব—বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন ধারণা যেন। অবাক হয়েছি দেশি কুকুরকে কীভাবে পোষ মানিয়ে ক্যামেরার সামনে কাজ করানো হয়েছে!
সাব্বিরের চরিত্রটির নাম রইস। সিনেমা দেখে অনেকের মনে হবে লোকটি পাগল। পরে মনে হবে রহস্যময় কোনো যুবক। বনের পশুপাখির ভাষা বুঝতে পারা রইস পাগলের মধ্যে প্রবেশ করাটা খুব সহজ কাজ নয়। কাজটি কঠিন ছিল। চ্যালেঞ্জিং ছিল। মীর সাব্বির কঠিন চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই উতরে গেছেন তার সাবলীল অভিনয় দক্ষতায়।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীরা ‘রাত জাগা ফুল’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। আবুল হায়াত, দিলারা জামান, শর্মিলী আহমেদের মতো সিনিয়র শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। ফজলুর রহমান বাবুর মতো শিল্পী অভিনয় করেছেন। অধিকাংশ শিল্পীরা শতভাগ ভালোবাসা ঢেলে দিয়ে অভিনয় করেছেন। এ সিনেমা দেখতে দেখতেই খেয়াল করলাম আকাশ রঞ্জন ভালো অভিনেতা হয়ে উঠছেন। গল্পের সঙ্গে চলচ্চিত্রের গানের সংমিশ্রণ চমৎকার। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হলো গল্প কোথাও ঝুলে যায়নি, কোথাও গল্প হারিয়েও যায়নি। যেটা নতুন ছবি বানাতে গিয়ে অনেকের ক্ষেত্রেই হয়।
চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলকে খুব কাছ থেকে গভীরভাবে দেখার সুযোগ হবে। আগেই জেনেছিলাম বরগুনায় শুটিং হয়েছে। যারা ঘোরাঘুরি পছন্দ করেন, তাদের এই নতুন জায়গা আকর্ষণ করবে। গল্প অনুসারে দৃশ্যায়ণ ও ক্যমেরার কাজও আকর্ষণ করবে।
কিছু সমালোচনার জায়গা থাকবেই, এটা অস্বাভাবিক নয়। ব্যক্তিগতভাবে বলব ভালো লাগতো, শেষভাগের নাটকীয়তা যদি আরও গাঢ় হতো। পরিস্কার করে বললে, ফজলুর রহমান বাবুর পরিণতির পেছনে কুকুরের ভূমিকা দেখানো হয়েছে, সেই অংশে বদলে যাওয়া মীর সাব্বিরের সংশ্লিষ্টতা থাকলে ভালো লাগতো। এ ছাড়াও ফারিয়া ও মিলন চরিত্রের উপস্থিতি যেভাবে অপরিহার্য দেখানো হয়েছে, তেমনটা শেষাংশে দেখাতে পারলে ভালো হতো।
সবশেষে বলব, কতটা শৈল্পিক নির্মান মীর সাব্বির করেছেন, তা না হয় আপনারাই বিবেচনা করবেন। এটুকু অন্তত নির্দ্ধিধায় বলব, সিনেমা নির্মাণের শ্রম আর সততার পরিচয় দিয়েছেন নির্মাতা। দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন অন্যান্য অভিনয়শিল্পীরাও। অতএব, আপনারা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমাটি দেখুন। সুন্দর গল্প পাবেন। জীবনের ভিন্নধর্মী আলেখ্য পাবেন। নিরাশ হবেন না। ‘রাত জাগা ফুল’ একই সঙ্গে আপনাকে হাসাবে ও কাঁদাবেও।