শাবিপ্রবিতে পুলিশের গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ, আহত অর্ধশত
প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল। এ সময় তারা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাকে মুক্ত করতে টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অর্ধশত শিক্ষার্থী ও এক নারী পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের ভেতরে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রেখে বাইরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।
আহতদের উদ্ধার করে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ অতর্কিত আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়।’
তবে পুলিশের দাবি উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চড়াও হয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ওয়াজেদ আলি ভবনের ভেতর ঢুকেন। তখন নিরাপত্তাকর্মীরা সকল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তাই বাইরে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। তারপর হঠাৎ পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস এবং গুলি ছুঁড়ে। এতে অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন।’
এ ব্যাপারে জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) খালেদ মামুন বলেন, ‘উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশের উপর চড়াও হন। তখন টিয়ারগ্যাস ছেড়ে ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। উপাচার্যকে উদ্ধার করে বাসভবনে পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হন উপাচার্য। তখন উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারীরা। তখন দ্রুত উপাচার্য ওই জায়গা ত্যাগ করে এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে এসে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভবনের ভেতরে জোর করে ঢুকতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ডরা তাদের বের করে দিয়ে নিরাপত্তা কর্মীরা এই ভবনের সবগুলো গেইটে তালা লাগিয়ে দেন। তখন শিক্ষার্থীরা ভবনের বাইরে অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করে অবরুদ্ধ করে রাখেন উপাচার্যকে।
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ তার উপর শিক্ষার্থীরা আক্রমণ করেছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার উপর শিক্ষার্থীরা আক্রমণ করেছে, আমি এটা কল্পনা করতে পারিনি৷ আমি শিক্ষার্থীবান্ধব ভিসি হিসেবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সবসময় চিন্তা করি কিন্তু তাদের এই আচরণে আমি বাকরুদ্ধ।’
তবে আন্দোলনকারীরা ভিসিকে আক্রমণের কথা অস্বীকার করেন। তারা বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের দাবি কখন মানা হবে এটা জানতে চেয়েছি। আক্রমণ করা দূরের কথা অসম্মান হয় এমন কোনো আচরণ করিনি।’
এর আগে সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে রবিবার সকাল ৮টা থেকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে সড়ক অবরোধ করে তৃতীয় দিনের মত আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাত্রলীগের হামলার পর রাত ১২টার দিকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে একটি মশাল মিছিল বের করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রদক্ষিণ করে।
এর আগে গতকালও আন্দোলরত ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ ওঠে। ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, প্রক্টরের উপস্থিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেন। সে হামলায় অন্তত ১০জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এসও/এএন