১২ দফা দাবীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতিবাদসভা
লেখা ও ছবি : আসাদুল্লাহ গালিব, প্রতিনিধি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সব সরকারী কর্মকর্তাদের পেশাগত নানা বৈষম্য দূর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ মাস্টার রোলে চাকরিরতদের সঠিক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদন্নোয়ন অভিন্ন নীতিমালাসহ মোট ১২ দফার দাবিতে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি এবং প্রতিবাদসভার আয়োজন করেছেন উত্তরবঙ্গের সেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিস ও বিভাগে কমরত ২শ’র বেশি কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে বিপুল নারী কর্মকর্তাও ছিলেন।
গতকাল রোববার ১৯ জুন সকাল ১১ টা থেকে তারা কর্মবিরতিতে গিয়ে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনের পাশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত প্যারিস রোডে কর্মসূচিগুলো পালন করেন, জানিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশ ২৪.কমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র আসাদুল্লাহ গালিব।
এই কর্মসূচিতে শিক্ষকদের মধ্যে পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফা (ডি. ইঞ্জি) সভাপতি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন, জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিবাদ সভায় দর্শন বিভাগের সহকারী সেকশন অফিসার মাসুদ রানা বলেছেন, ‘আজকে আমরা অফিসে বসে শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকদের জন্য কাজ করার বদলে রাস্তায় অবস্থান করছি।’
তিনি বলেছেন, ‘ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন)’র কালো থাবায় এই বিশ্ববিদ্যালয় সিনিয়র কর্মকর্তাদেরও রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। এর মত লজ্জা আর কী হতে পারে?’
মাসুদ রানা আরো বলেছেন, “ইউজিসির সদস্যরা একটি ‘আম্বেলা কমিটি’ গঠন করে বাংলাদেশের ৫২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অভিন্ন নীতিমালা ও কার্যক্রমে আনতে চাচ্ছেন। আমরা গোপন সূত্রে শুনেছি, তারা আমাদের অনেককে কর্মজীবনে মোটে দুটি প্রমোশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইনের নীতিগতভাবে লঙ্ঘন হবে বলে জানিয়ে দিচ্ছি।’
মাসুদ রানা বলেছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের দাবীগুলোর মধ্যে আছে- ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি, প্রশাাসনিক যতগুলো কোটা পদ খালি আছে, সেগুলোতেও যোগ্যতম বাচাই করে নিয়োগ দিতে হবে। সব কর্মকতা ও কর্মচারীর যোগ্যতা অনুসারে পদোন্নতি ও পদায়নের সুযোগ এবং সুবিধা থাকবে।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার আমাদের দাবিগুলোকে অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন-এমনটাই প্রত্যাশা।’
শারীরিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা কামরুজ্জামান চঞ্চল বলেছেন, ‘ইউজিসি গোপনভাবে কর্মকর্তা ও কমচারীদের ন্যায্য অধিকার খর্ব করার যেসব যড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, প্রকাশ করে আজ আমরা সারা বাংলাদেশকে জানাতে চাই। তাদের কাজের প্রতিবাদে আজ আমরা আন্দোলনে নেমেছি।’
তিনি বলেছেন, “আমি সেই শিক্ষকদেরকে ধিক্কার জানাই, যারা আমাদের ‘শ্রমিক’ মনে করেন। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমরাও আপনাদের থেকে কোনো অংশে কম নই। যদি তাই না হয়, তাহলে কেন আমাদের কর্মস্থল দখল করতে আসেন?”
অডিট সেলের কর্মকর্তা মাসুম আল রশিদ বলেছেন, “অনেকেই আমাদের এর আগে প্রশ্ন করেছেন, ১২ দফা এই দাবিগুলোর যৌক্তিকতা? বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমাদের কেন করা হবে না?’
তিনি বলেছেন, ‘যারা প্রথম শ্রেণীতে সেকশন অফিসার হিসেবে যোগদান করবেন, শুধু তাদেরই পদোন্নতি হবে এটি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কেমন নীতিমালা?’
অডিট সেলের কর্মকর্তা মাসুম আল রশিদ আরো বলেছেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতে গিয়েও কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে চাকরি করেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা কেন বঞ্চিত?’
তারা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কেন এত বৈষম্যের শিকার হতে হবে? দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
ওএস।