পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশলার দাম, স্বস্তি ফেরেনি চালে
বাজারের অন্যান্য দ্রব্যাদির সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশলার দাম। ঈদের আগে আদার কেজি ছিলো ১৮০ টাকা। ঈদের পরে সেই আদা ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে বিদেশি আদার দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে তা ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে।
ঈদের পর গত সপ্তাহে হঠাৎ করে ৫০ টাকা দরের পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজি প্রতি ৬০ টাকা হয়ে গেছে। তবে ফরিদপুরেরটা একটু কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এ সপ্তাহে আর বাড়েনি। রসুনও বাড়তি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বিদেশি রসুন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি, তবে দেশিটা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। জিরার দামও লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা কেজিতে বেড়ে ৮০০ টাকা হয়ে গেছে।
শনিবার (৬ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, টাউনহলসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
নতুন ধান উঠলেও কমেনি চালের দাম
দেশের হাওর, উত্তরাঞ্চলসহ প্রায় এলাকায় ধান উঠলেও চালের দাম তেমন কমেনি। আগের মতোই আছে বলে জানান বিক্রেতারা। বর্তমানে মোটা স্বর্ণা চাল ৫০ টাকা, ২৮ ও পাইজাম ৫২ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট মিনিকেট চালের কেজি ৭২ টাকা থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আ. আওয়ালসহ অন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন বোরো ধান উঠলে মাঝারি চালের দাম কমবে মনে হয়েছিলো। কিন্তু তেমন কমছে না। কারণ ধানের দাম বেশি। তবে সারা দেশের ধান উঠলে সরবরাহ বেশি হওয়ায় কিছুটা কমতে পারে।
খোলা চিনির কেজি ১৪০ টাকা
সরকার চিনির কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে ১০৪ টাকা বিক্রির ঘোষণা দিলেও ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে। কারওয়ান বাজারের সততা ট্রেডার্স, সালমান ট্রেডার্স, লক্ষীপুর স্টোর, আ. গনি স্টোরসহ অন্যান্য খুচরা ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, শুধু শুনছি চিনির দাম কমেছে কিন্তু আমরা তো পাচ্ছি না। তাই বিক্রিও করতে পারছি না। আবার কোথাও পাওয়া গেলেও ১৪০ টাকার কম বিক্রি করা যাচ্ছে না। সালশান ট্রেডার্সের মাসুম বলেন, গোড়ায় দাম বেশি। তাই চিনি রাখি না। আবার কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রেইজের আবু তাহেরসহ অনান্য ব্যবসায়ীরা জানান সেই ঈদের আগে থেকে চিনি নেই।
তবে সরকার সয়াবির তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ালেও আগের রেটে ১ লিটার ১৮৫ থেকে ১৮৭ টাকা, ২ লিটার ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা ও ৫ লিটার ৮৭০ থেকে ৯০৫ টাকা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। তবে কোনো কোনো বাজারে নতুন রেটের তেল না আসলেও আগের রেটের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
মাংসের আর ডিমের দামে অনিশ্চয়তা
ঈদের পর মুরগির দাম লাগামগীন হয়ে পড়ে। তবে কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় ব্রয়লার হাউজ, মায়ের দোয়া, ঢাকা ব্রয়লার, নুরজাহান ব্রয়লার হাউজের বিক্রিয়কর্মীরা জানান, আগের চেয়ে দাম কমেছে। বর্তমানে ব্রয়লার ২১০ থেকে ২২০, পাকিস্তানি মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি মুরগির দাম কমে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ডিমের দাম তিন দিনের ব্যবধানে ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।
মাংসের দাম কমলেও আগের দামেই মাছ বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানালেন কারওয়ান বাজার ও টাউনহলের বসায়ীরা। বিক্রেতারা জানান, ঈদের পর থেকেই রুই, কাতলা ২৫০-৪৫০ টাকা কেজি। চিংড়ি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আড় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৩০০-৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০, কাজলি ও বাতাসি ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, আকারভেদে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি ।
লেবু, মরিচের দাম কমলেও চড়া সবজির দাম; অপরিবর্তিত ডাল, আটা ময়দা
রমজানে অনেক বেশি দামে লেবু বিক্রি করা হলেও বর্তমানে ২০ থেকে ৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের স্বপন বলেন, বর্তমানে লেবুর ডজন ২০ থেকে ৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। মরিচও কম দামে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা।
ঈদ ফুরিয়ে যাওয়ায় শসার দামও কমেছে। তা ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, পটল ও করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আলু ৩৫ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা, মূলা ও পেঁপের কেজি ২০-৩০ টাকা, গাঁজর ৩০-৪০ টাকা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। তবে সজনার দাম কমে ৭০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, লাল ও পালং শাকের আঁটি ১০ টাকা, ও ধনিয়ার পাতা ১০ থেকে ১৫ টাকা আটি ও পুঁইশাক ২০ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে। তরে ভরা মৌসুম হলেও ঝিঙ্গা ও ধুন্দুল বেশি দামে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে আগের মতোই মসুর ডাল ৯৫ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি, প্যাকেট আটা ২ কেজি ১৩০ টাকা ও খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা, ময়দা ১৫০ টাকা, ছোলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে দেখা গেছে, এলাকা ভেদে একই পণ্য কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম বেশি দামে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও এই চিত্র দেখা গেছে।
জেডএ/এএস