বৃহস্পতিবারের বাজারদর
বাণিজ্যমন্ত্রীর কথার উল্টোচিত্র বাজারে
কয়দিন আগের বাড়ানো ভোজ্যতেল বাজারে একেবারে উধাও হয়ে গেছে। আগের সপ্তাহে পাঁচ লিটার তেল ৭৫০ থেকে ৭৮৫ টাকা বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবারে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রোজার আগে তেলের দাম বাড়বে না বললেও বাজারে উল্টোচিত্র দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) মিল মালিকদের নতুন করে বাড়ানো পাঁচ লিটার তেল ৮০০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ২৫০ টাকা পাল্লা বা ৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৩০০ টাকা পাল্লা বা কেজি ৭০ টাকা বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চালের দাম ২ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি, ডালের কেজিতেও ৫ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আলুও বাড়তি দামে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহের ব্যবধানে একেবারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। তবে স্থিতিশীল মাছ, ডিম, বেগুনসহ অন্যান্য সবজির দাম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
চাল কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা
গত সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক টাকা বাড়লেও এ সপ্তাহে বেড়েছে দুই টাকা। জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মেসার্স কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মো. আবুল কাসেম ঢাকাপ্রকাশকে জানান, আগের সপ্তাহে এক টাকা বাড়লেও এ সপ্তাহে মিনিকেট চাল দুই টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আগের দামেই বিআর-২৮ চালের কেজি ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা, পারিজা ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে একই চাল কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পাইকারির চেয়ে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
৫ লিটার ভোজ্যতেল বেড়ে ৮০০ টাকা
সরকারের ঘোষণা করা বাড়তি দামের তেল গত সপ্তাহে কারওয়ান বাজারের নিউ সোনারগাঁও জেনারেল স্টোরসহ বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হলেও আজ ৩ মার্চ তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই দোকানের রিপন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে পাঁচ লিটার ভোজ্যতেল ৭৫০ থেকে ৭৮৫ টাকা, ২ লিটার ৩২০ টাকা, এক লিটার ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু আজ তা নেই। ৫ লিটার ৮০০ টাকায় কিনে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কোনো লাভ ছাড়াই বিক্রি করতে হচ্ছে। একই কথা জানান ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘বেশি দামে ৫ লিটার ৮০০ টাকা কিনে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ আগের সপ্তাহে ২ লিটার ৩৩০ টাকা, ৫ লিটার ৭৭০ থেকে ৭৮৫ টাকা বিক্রি করা হয়েছে। সেই তেল নেই।’ ডালের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে আগের মতো আটা, চিনি, ছোলাসহ অন্যান্য জিনিস বিক্রি হচ্ছে।
ইউসুফ জেনারেল স্টোরের সুজন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘চিনি ৭৫ টাকা কেজি, দুই কেজি আটা ৮০ টাকা, ডাল ৯০ থেকে ১১০, ছোলা ৭০ টাকা কেজিসহ বিভিন্ন মসলা আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে’।
পেঁয়াজের কেজি বেড়ে ৭০ টাকা
গত সপ্তাহে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা পাল্লা বা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও আজ বৃহস্পতিবার দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। মতলব বাণিজ্যালয়ের করিম বলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে। আজ ৩০০ টাকা পাল্লা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আগের মতোই দেশি রসুন কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা ও চায়না রসুন ৯০ থেকে ১২০ টাকা, দেশি আদা ৯০ টাকা ও চায়না আদা ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আগের সপ্তাহের মতোই আলু পাইকারি বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পাল্লা বা ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা বাজারে তা ১৭ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। টমেটোও পাইকারিতে ১৮ থেকে ২৫ টাকা কেজি হলেও খুচরা পর্যায়ে তা ২৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ থেকে ৫০, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শসা ৩০ টাকা, গাঁজর ২০ টাকা, মুলা ২০ টাকা কেজি, শাকের আঁটি ৮ থেকে ১০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থিতিশীল গরু-খাসি-মুরগি মাংস
গত সপ্তাহে গরুর মাংসের দাম বেড়ে ৬৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবারও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের মেসার্স খোকন এন্টারপ্রাইজের টিপু সুলতান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে ৬৫০ টাকা টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে গরুর মাংস।
এদিকে মুরগির বাজারও গত সপ্তাহের মতো পাকিস্তানি কর্ক ২৭০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। জননী মুরগির আড়তের আব্দুল ওহাব ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আগের মতো দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি, ব্রয়লার ১৫০ থেকে ১৬০ কেজি ও পাকিস্তানি কর্ক সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। জনপ্রিয় খাসির মাংসের দোকানের নুরুল ইসলাম বলেন, আগের মতোই এ সপ্তাহে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ডিমের দামও আগের সপ্তাহের মতোই ডজন সর্বোচ্চ ১১০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
আগের মতো মাছের বাজার
আগের সপ্তাহের মতোই মাছের বাজার স্থিতিশীল বলে বিক্রেতারা জানান। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী এনামুল বলেন, ‘আকারভেদে রুই ও কাতলা ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি আকারভেদে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, চাষের শিং মাছ ৩০০, দেশি শিং ৬০০-৭০০ টাকা, চাষের কই ৩০০ টাকা ও দেশি ৫০০ টাকা, দেশি শোল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, ট্যাংরা ৪০০ থেকে ৭০০, আইড় আকারভেদে ৪০০ থেকে ১২০০, ইলিশ মাছও ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
জেডএ/আরএ/