অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রীর
বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সরকারের চেয়ে বড় হাত আর কারও নেই। আমরা স্ট্রিক বলে দিয়েছি দাম বাড়ানো যাবে না। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষে বুধবার (২ মার্চ) আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
নিত্য পণ্যের মজুদ পরিস্থিতি সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, নিত্য পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে। কোন সংকট নেই, সমস্যা নেই। রমজান পর্যন্ত চলবে। আগামী ৩১ মে'র পর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাবে না এবং ৩১ ডিসেম্বরের পর খোলা পাম অয়েল বিক্রি করা যাবে না।
টিপু মুনশি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে আমাদের ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন বসে একটা সূচকের ভিত্তিতে ঠিক করে যে বাজারে কি দাম হওয়া উচিত। আমাদের ল্যান্ডেড কস্ট কত, ইনফ্রাস্ট্রাকচার কত, প্রফিট কত হওয়া উচিত, বোতলের দাম কত এসব নিয়ে একটা দাম ফিক্সড করে দেয়। আমরা হিসাব করে দেখেছি যে সেখানে কিছু গড়মিল দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি, ভোক্তা অধিকার, ক্যাব, কম্প্রিটিটিভ কমিশন, গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন বিভাগকে ডেকেছি। তাদেরকে এই নির্দেশ দিয়েছি যে এবং প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে যে নির্দেশটা আমাকে জানানো হয়েছে সেটা হল যৌক্তিভাবে এটা কন্ট্রোল করতে হবে। যেটা আছে সেটা মেনটেইন করতে হবে। কোনভাবেই কোন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্র্যাকটিসকে একসেপ্ট করা যাবে না। যতদূর যাওয়া দরকার, যত শক্ত হওয়া দরকার তারা যেন সেই ব্যবস্থা নেন। ভোক্তা অধিকার এরমধ্যে শুরু করেছে। ডিজিএফআই, এনএসআই, পুলিশ এবং বাজার মনিটরিং এ যারা রয়েছে সবার সঙ্গেই এ নিয় কথা হয়েছে। তারা সবাই জানেন কি দাম হওয়া উচিত। এখানে কোন কালো হাত যেন প্রভাব বিস্তার না করতে পারে।
তিনি বলেন, সামনে রমজান মাস। মানুষের প্রয়োজনটা বাড়বে। এই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। টিসিবি তাদের যে ক্যাপাসিটি ছিল, অ্যাবিলিটি ছিল তার চার গুণ ক্ষমতা নিয়ে তারা বাজারে আসছে। রমজান মাস সামনে রেখে আগামী এক মাস বা দেড় মাসের মধ্যে এক কোটি মানুষকে টিসিবি তাদের পণ্য পৌঁছে দেবে। এই এক কোটি মানুষের কাছে যদি যাওয়া হয় তাহলে আমরা মনে করি অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ এর সুবিধাটা পাবে।
তিনি মিডিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা মানুষকে সচেতন করার একটা বিশাল দায়িত্ব পালন করতে পারেন। আপনারা যদি মানুষকে জানাতে পারেন যে, এই ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিয়েছে সরকার। এইটা ন্যায্য দাম। এর বেশি বিক্রয় হওয়া উচিত নয়।
লেভেল তুলে দিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এই ধরণের কাজ যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেখানে যেভাবে দরকার অর্থাৎ যৌথ অভিযান প্রয়োজন হলে করা হবে। যদি পুলিশ পারে পুলিশ করবে। ডিসি করবে, ভোক্তা অধিকার করবে। সবার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আছে। আর কোথাও যদি মনে করা হয় সবাই একসঙ্গে অভিযানে যাওয়া দরকার তাহলে এক সঙ্গে যাবে।
খোলা তেলের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে বোতল কেটে খোলা তেল বিক্রি করছে, এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ শুনার পরিপ্রেক্ষিতে আজকে ডিজিএফআই, এনএসআই, পুলিশ, ভোক্তা অধিকার, ট্যারিফ কমিশন সবাইকে বলেছি, এই যে এসব কথা শুনছি এর বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যান।
এসময় তিনি বলেন, সরকারের চেয়ে বড় হাত কারো নেই। আমরা সব রকমক সুবিধা দিতে চাই, বসতে চাই। কিন্তু তাই বলে এমন না যে তারা সুযোগ নেবে। মাঝখানে তারা এসেছিল ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর জন্য। আমরা পরিস্কার বলে দিয়েছি ‘ইমপসিবল’। কোথাও সুযোগ নিতে দেব না।
বাজারে খোলা ভোজ্য তেল বিক্রি করা যাবে না
বাজারে আর কোন খোলা তেল বিক্রি হবে না। এবিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা এ নিয়ে যৌথভাবে কাজ করছি। আগামী ৩১ মে এবং ৩১ ডিসেম্বরের পর বাজারে আর কোন ভোজ্যতেল খোলা বিক্রি করা হবে না। সবই বোতলজাত বিক্রি হবে। এরমধ্যে ৩১ মে’র পর থেকে সয়াবিন তেল এবং ৩১ ডিসেম্বরের পর পাম অয়েল খোলা বিক্রি করা যাবে না। সবই বোতলজাত করে বিক্রি করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যেল মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিটিশন কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড টেরিফ কমিশনের চেয়ারম্যান(সচিব) মো. আফজাল হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন, টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রি. জে. মো. আরিফুল হাসান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(আইআইটি) এ. এইচ.এম. সফিকুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ নেওয়াজ তালুকদার, এসবি’র ডিআইজি এ.জেড.এম. নাফিউল ইসলাম, ক্যাব প্রকাশিত ভোক্তা কন্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, শিল্প মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই, এনএসআই ও বিজিবি’র প্রতিনিধিরা
এনএইচবি/এএস