চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে
২০২১ সালে চীনের অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। গত বছরে অন্তত ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল দেশটির। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে চার শতাংশ। রয়টার্সের জরিপে দেশটির মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, তা ছাড়ালেও গত দেড় বছরের হিসেবে এই প্রবৃদ্ধিকে ধীরগতি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে শিল্প উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশে। ডিসেম্বরে খুচরা বিক্রয় বেড়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এর আগের বছরের তুলনায় বেশি। তবে করোনার কারণে চলতি বছর চীনের অর্থনীতি বাধার সম্মুখিন হতে পারে বরে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উৎপাদন খাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা চিপ ঘাটতি সত্ত্বেও ২০২১ সালে চীনের রপ্তানি ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে আমদানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর হওয়ায় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। ডিসেম্বরে দেশটির মাসভিত্তিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৯ হাজার ৪৪০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। গতকাল প্রকাশিত কাস্টমস ডাটায় এ পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
কোভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় বিশ্বজুড়ে চীনা পণ্যের তুমুল চাহিদা তৈরি হয়। এসময় স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় প্রসেসর চিপের ঘাটতি ব্যাপক আকার ধারণ করে। এমন সংকটে বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ রাখে বিভিন্ন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি চীনা সরকারের বিধিনিষেধে বিদ্যুৎ ঘাটতি থেকে উৎপাদন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় চীনের রপ্তানি বাণিজ্যে ধীরগতির আশঙ্কা করছিলেন বিশ্লেষকরা। যদিও এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর বিশ্বজুড়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্যযুদ্ধ সত্ত্বেও ২০২১ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৩৯ হাজার ৬৬০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ২৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। গত বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর এ বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। বাণিজ্য দূতরা কয়েকবার ভার্চুয়ালি আলোচনাও করেছেন। তবে এখনো পুনরায় মুখোমুখি আলোচনা শুরুর তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।
উচ্চ বাণিজ্য শুল্ক বজায় থাকলেও গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৫৭ হাজার ৬১০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে মার্কিন পণ্য আমদানি ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭১০ কোটি ডলার। ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গেও চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেড়েছে। এ সময়ে ব্লকটির সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ২০ হাজার ৮৪০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ইইউতে চীনা পণ্যের রপ্তানি ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৫১ হাজার ৮৩০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যেখানে চীনে ইউরোপীয় পণ্যের আমদানি ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৩০ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ২০২১ সালে চীনের আমদানি ৩০ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি মহামারির বিপর্যয় কাটিয়ে পুনরুদ্ধার হওয়ায় আমদানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।
তবে কোভিডজনিত বিধিনিষেধে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় চলতি মাসে চীনা পণ্যের রপ্তানি ধীর হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড বলেন, জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে চীনের রপ্তানি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কোভিডজনিত বিধিনিষেধে দেশটির কয়েকটি বন্দরের কার্যক্রম সংকুচিত করা হয়েছে। ২০২২ সালে রপ্তানি আয় বাড়ার পরিবর্তে কমে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
কেএফ/