সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বাড়ল তেলের দাম
কথা রাখলেন না ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা
কথা রাখল না ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। গত ৬ জানুয়ারি মিল মালিকরা বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে আপতত কোনো দাম বাড়ানো হবে না বলে একমত হয়েছিলেন। কিন্তু সাত দিনের ব্যবধানে প্রতি লিটার তেলে ৮ টাকা বেড়েছে। সব তেল বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল থেকে ডিও (বকেয়া হিসাবে পণ্য দেওয়া) নিচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সরকারিভাবে কোনো ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়নি। কাজেই তারা বেশি দাম নিতে পারে না। এমআরপি অর্থাৎ গায়ের মূল্য যা আছে সে দামেই বিক্রি করতে হবে। এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রিও করতে পারবে না। তা করতে হলে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন থেকে প্রতি লিটারে আট টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও আপতত তা বাড়ছে না। বর্তমানে যে মূল্য আছে, তা-ই থাকবে বলে গত সপ্তাহে তো সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের ডিও লেটার নিচ্ছে না মিলমালিকরা এমন প্রশ্নের ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব বলেন, শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। বাজারের অবস্থা কি তা দেখা হবে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বৃহম্পতিবার সরেজমিনে গেলে বিক্রেতারা জানান, হঠাৎ করে আজকে তেলের দাম বেড়ে গেছে। কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের সুজন ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, আগে কম দামে বিক্রি করা হলেও আজকে বেশি দামে কেনায় তীর পাঁচ লিটার তেল ৭২০ টাকা ও রূপচাঁদা ৭৩০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এর গায়ের মূল্য হচ্ছে ৭৬০ টাকা। তারা লিটারে বাড়িয়েছে আট টাকা। এটা আরও বাড়বে। এদিকে কারওয়ান বাজারের নিউ সোনারগাঁও জেনারেল স্টোরের রিপনও জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার বেড়েছে আট টাকা। আগে ৭২০ টাকা কেনা হলেও আজ তা ৭৬০ টাকায় কিনতে হয়েছে। পাইকারিতে বেশি দামে কিনা, তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশি দাম জানতে হলে পাইকারি দোকানে যান। সেখানে কারণ জানতে পারবেন।
তার কথা আমলে নিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী মিলু স্টোরের বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, পাঁচ লিটারে বেড়েছে ৪০ টাকা, মানে লিটারে আট টাকা। মিলমালিকরা আগে থেকে তেলের দাম বাড়ার বায়না করে আসছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে তারা। আজকে তারা ডিও লেটার দিচ্ছে না। আগের যা ছিলো সেই তেলের গায়ের মূল্য বাড়াতে পারেনি। কিন্তু যেহেতু তাদের সাড়া নেই, তাই বুঝা যাচ্ছে তারা দাম বাড়াবে। সরকার কঠোর না হলে তা ঠেকানো যাবে না।’
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দেশে ভোজ্যতেল বাজারজাতকারী ব্যবসায়ীদের সমিতি ‘বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’ কয়েক মাস ধরে তেলের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। কোনো কোনো মাসে তিন দফা দর বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। তা আমলে নিয়ে গত ৬ জানুয়ারি ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপসহ বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নেতৃত্বাধীন টিম। এই টিমের সুপারিশের ভিত্তিতেই ভোজ্যতেলের অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি ঠিক করা হবে। এরপরই ভোজ্যতেলের নতুন মূল্য ঘোষণা দেয়া হবে।
জেডএ/এএস