বৃহস্পতিবারের বাজারদর
রমজানের আগে কিছুটা স্বস্তি
রমজান মাস ঘনিয়ে আসলেও ইফতারির উপকরণ পেঁয়াজ, আদা, মরিচ, বেগুণের দাম বাড়েনি। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দাম। স্থিতিশীল আছে চাল, মুরগিসহ কিছু পণ্যের দাম। ফলে রোজার মাস শুরুর আগে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে বাজার দরে।
ক্রেতারা বলছেন, যেভাবে হোক রমজানে নিত্যপণ্যের দাম যাতে আর না বাড়ে। কারণ সয়াবিন তেলসহ প্রায় জিনিসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সংসার চালা কঠিন হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দামের ব্যাপারে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
পেঁয়াজের কেজি কমে ৩০ টাকা
রমজান ঘনিয়ে আসলেও সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে সর্বোচ্চ ১০ টাকা। ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪২ টাকা কেজির পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। মেসার্স মাতৃ ভান্ডারের কালাম শেখ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আগের সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা বিক্রি করা হলেও বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি আদা ও রসুন ৬০ টাকা ও চায়না রসুনের কেজি কমে ১২০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
আগের মতোই আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে গত সপ্তাহে কেজি প্রতি শসা ৩০ টাকা বিক্রি করা হলেও বৃহস্পতিবার দ্বিগুণ হয়ে ৬০ টাকা কেজি, গাঁজর ৩০ টাকা, মুলা ২০ টাকা কেজি, শাকের আঁটি ৮ থেকে ১০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আগের সপ্তাহে মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও আজ কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছে বিক্রেতারা। করলার দাম কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, সজনে ডাঁটার দাম কমে ১০০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
কমেনি চালের দাম
বাজারে চালের দাম কমাতে হবে খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদারের বলার ১০ দিন পরও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে কারওয়ান বাজারের মেসার্স হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্স এর মালিক জসিম উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান। তিনি বলেন, ‘যে যায় বলুক, বোরো ধান উঠার আগে আর কমবে না চালের দাম। এক মাসে কেজিতে এক টাকা বেড়ে মিনিকেট ৬২ থেকে সর্বোচ্চ ৬৬ টাকা কেজি, আটাশ ৪৮ থেকে ৫৪ ও মোটা চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মো. আবুল কাসেমও ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘আগের সপ্তাহের মতো মিনিকেট ৬৫ টাকা কেজি, বিআর-২৮ চাল ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, পারিজা ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’
এ সময় ইসমাইল নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বেড়েছে। খুবই বেশি। চালের দাম ৬৬ টাকা কেজি। এটা কমলে ভালো হতো। সরকারের উচিৎ যেভাবে হোক ভোক্তাদের স্বার্থে কমানো দরকার। কারণ সংসার চালা কঠিন হয়ে গেছে’।
কমেছে ভোজ্যতেলের দাম
সরকারের ভ্যাট কমানো ও বাজার মনিটরিংয়ের প্রভাব বাজারে দেখা গেছে। মিলমালিকরা কমিয়েছে তেলের দাম। এরফলে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে কমতে শুরু করেছে। ফ্রেশ সয়াবিন ৫ লিটার ৭৩০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান কারওয়ান বাজারের ইউসুফ স্টোরের মো ইউসুফ। তিনি বলেন, দাম কমছে। তাই কম দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। এই তেলের গায়ের মূল্য ৭৬০ টাকা। তবে আগের প্যাকেটজাত এক লিটার তেল ১৫৮ টাকা, ৫ লিটার ৭৫০ থেকে ৭৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে চাটখিল স্টোরের নসু জানান। একই কথা জানান লক্ষীপুর স্টোরের মিরান। তিনি আরও বলেন, ‘রজমান মাস ঘনিয়ে আসলেও আগের মতোই ছোলার কেজি ৭৫ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১২৫ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা। তবে চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে খোলাটা ৭৫ টাকা ও প্যাকেট চিনি ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে ইউনিলিভারের সব পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ডিপলোমা দুধের কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৭৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’ এ সময় ৭০ বছরের বেশি সাবেক কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বেড়েছে। অনেক জিনিসের দাম বছরের ব্যবধানে দ্বিহুণ হয়ে গেছে। আগে ২ হাজার টাকায় ব্যাগ ভর্তি বাজার করা হলেও বর্তমানে তার দ্বিগুণ লাগে।’
এসময় পাশের দোকানদার মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক সাইফুদ্দিন বলেন, ‘তেল মিলমালিকসহ অন্যরাও সবেবরাতের আগেই কৌশল করে সব জিনিসের দাম বাড়িয়েছে। তারপর একটু কমাচ্ছে। তাতেও আগের মতো হয়নি দাম। তাই বলা যাবে না দাম কমেছে। আগের অবস্থায় ফিরেছে।
কমেছে মাছের দাম
রমজান মাস ঘনিয়ে আসলেও আগের সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও কমেছে মাছের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বলে বিক্রেতারা জানান। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবু বকর বলেন, ‘আকারভেদে রুই ও কাতলা ২০০ থেকে ৪৩০ টাকা কেজি, চিংড়ি আকারভেদে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, চাষের শিং মাছ কেজি ৩০০ টাকা, দেশি শিং ৬০০-৭০০ টাকা, চাষের কই ৩০০ টাকা ও দেশি ৫০০ টাকা, দেশি শোল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, ট্যাংড়া ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে ইলিশ মাছে রমাজানের ঝাঁজ লেগে গেছে সপ্তাহের ব্যবধানে। আগে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা এক কেজির ইলিশ মাছ হয়েছে ১৪০০ টাকা কেজি। তবে দেড় কেজি হলে ১৫০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এই দাম আরও বাড়বে।’
স্থিতিশীল গরু-খাসি মাংস ও মুরগির দাম
আগের সপ্তাহের মতোই গরুর মাংস ৬৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ৯৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান জনপ্রিয় মাংস বিতানের নুরুল ইসলাম। ক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, ‘রমজান আসার আগে সব জিনিসের দাম বাড়ে। এখানো বাড়েনি মাংসের দাম। ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক বলা যায়’
আগের মতোই বয়লার ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি কর্ক ৩০০, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫ টাকা কমে ডিমের ডজন সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
জেডএ/