৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট: কে কত নিয়েছে জানাল সিপিডি
৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট: কে কত নিয়েছে জানাল সিপিডি। ছবি: সংগৃহীত
২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি। সিপিডি বলছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। গত ১৫ বছরে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এই হিসাব তুলে ধরেন। বিভিন্ন ঋণ খেলাপির ঘটনায় বিশাল পরিমাণ এই অর্থ বেরিয়ে গেলেও এর বিপরীতে ‘যৎসামান্য’ অর্থ আদায় হয়েছে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ‘শক্তিশালী’ করার ওপর জোর দেন ফাহমিদা।
গত ১৫ বছরে এই বিশাল অঙ্কের টাকা কোথায় কত গেছে-
* সিপিডির হিসাবে, রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালি ব্যাংকের হলমার্ক গ্রুপ নিয়ে গেছে ৪ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।
* জনতা, প্রাইম, যমুনা, শাহজালাল ও প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপ নিয়ে গেছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
* বেসিক ব্যাংক থেকে ২০১৫ সালে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ঘটনায় ৬০টি মামলা করেছে ১২০ জনের বিরুদ্ধে।
* এননটেক্স জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ।
* ২০১৬ সালে থার্মেক্স গ্রুপ এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ৮১৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়, যদিও জনতা ব্যাংকে ওই কোম্পানির ঋণ সীমা ছিল ২৬৪ কোটি টাকা।
* জনতা ব্যাংক থেকে ২০২০ সালে ঋণ সীমা লঙ্ঘন করে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ ১ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালে গ্লোবাল ট্রেডিং ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ নেয়।
* এবি ব্যাংকে ১৬৫ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের ঘটনায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করে দুদক মামলা করেছে।
* গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার ২০২১ সালে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম করেন। এ ঘটনায় দুদক ৩৭টি মামলা করেছে তার বিরুদ্ধে।
* এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ২০১৬ সালে ৭০১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয় অনিয়মের মাধ্যমে।
* ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে এস আলম গ্রুপ বেনামি কোম্পানির মাধ্যমে। এ বিষয়ে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ঋণ অনিয়মের অনুসন্ধানের জন্য উচ্চ আদালতে পিটিশন দাখিল করেন এক আইনজীবী।
* ইসলামী ব্যাংকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে অপরিচিত নয়টি কোম্পানিকে নিয়ম লঙ্ঘন করে ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার দেওয়া হয়। মিথ্যা তথ্যে রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিকে এই ঋণ দেওয়া হয়।
* এছাড়া ভুয়া কোম্পানিকে ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকার ঋণ দেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
অনিয়ম-খেলাপির প্রধান এই ঘটনাগুলোর বাইরেও অনেক ঋণ খেলাপির ঘটনা রয়েছে। সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, তা পুরোটা নয়। ১০ বছর আগে খেলাপির পরিমাণ ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা থাকলেও সবশেষ গত সেপ্টেম্বর শেষে তা ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়।’
এছাড়া ঋণ পুনঃতফসিল, মামলার কারণে খেলাপি দেখাতে না পারা ও অবলোপন করা খেলাপি ঋণের তথ্য দেখানো হয় না বলে জানান তিনি।