পল্লবীর জনি হত্যার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মাদকসহ আটক
রাজধানীর পল্লবী থানা হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি (২৮) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি পুলিশের সোর্স রাসেলকে মাদকসহ আটক করেছে লালবাগ থানা পুলিশ।
রবিবার (৬ই মার্চ) দুপুরে রাজধানীর লালবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আসামির দেহ তল্লাশি করে ৭৫ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে পুলিশ।
লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)এসএম মোর্শেদ হোসেন বলেন, গ্রেফতারকৃত রাসেলের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং সোমবার (৭ মার্চ) তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও পুলিশের সোর্স নামে পরিচিত রাসেল জনি হত্যা মামলার ৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। সে ২০২০ সালে জনি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আত্মগোপন করে। মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় বসবাসরত জনির আত্নীয়-স্বজনরা বারবারই অভিযোগ তুলে যে, রাসেল প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছে এবং মাদক বিক্রি সেবন সহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে।
জনি হত্যা মামলায় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আদালত তৎকালীন পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান খান, এএসআই রাশেদুল ইসলাম, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টুকে যাবজ্জীবন সাজা খাটার পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডের নির্দেশ দেন। মামলায় আরো বলা হয়েছিলো যে, দণ্ডপ্রাপ্ত ঐ তিন পুলিশ যদি অর্থ দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদেরকে আরো ৬ মাস করে সাজা খাটতে হবে।
জনি হত্যা মামলার বিবরণ:
২০১৪ সালের ৭ই আগস্ট নিহত জনির ভাই রকি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ‘নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে’ এই মামলা দায়ের করেন। মামলার আবেদনে বলা হয়, ওই বছর ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের ইরানি ক্যাম্পে বিল্লাল নামে এক ব্যক্তির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের দাওয়াতে গিয়েছিলেন জনি। মামলার বাদী জনির ভাই রকি নিজেও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। গায়েহলুদের ওই অনুষ্ঠান চলাকালীন পুলিশের সোর্স সুমন মাতাল অবস্থায় অনুষ্ঠানে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করলে জনি তাকে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলে। এরপর কথা কাটাকাটি হয় তাদের মধ্যে। তখন ঝগড়ার এক পর্যায়ে জনি চড় মারলে সুমন ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে রাগন্বীতভাবে অনুষ্ঠান ত্যাগ করে চলে যায়। এ ঘটনার আধা ঘণ্টা পর এসআই জাহিদসহ কয়েকজন পুলিশ এসে অনুষ্ঠান থেকে জনিকে থানায় নিয়ে যান। সেখানে তার উপর নির্মম নির্যাতন চলে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
“জনিকে পল্লবী থানার হাজতে নিয়ে এসআই জাহিদসহ অন্য আসামিরা হকিস্টিক, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে এবং জনির বুকের ওপর উঠে আঘাত করে। জনি পানি চাইলে এসআই জাহিদ তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেন।” নির্যাতনে জনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর অনেক আগেই জনির মৃত্যু হয়েছে। এ মামলায় আরও বলা হয়, ‘নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে’ আসামিরা পল্লবীর ইরানি ক্যাম্প ও রহমত ক্যাম্পের মধ্যে ‘মারামারির মিথ্যা কাহিনী’ তৈরি করেছিল। ওই মারামারিতেই রকিসহ কয়েকজন গুরুতর আহত ও জনি নিহত হন দাবি করে এসআই শোভন কুমার সাহা (আসামি) পল্লবী থানায় একটি মামলাও করেছিলেন।
পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি জিয়াউজ্জামান মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে ‘ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যান’ বলে বাদীর আবেদনে উল্লেখ করা হয়। সে সময় আদালত রকির আবেদন শুনে এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই সোর্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
রকির করা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি জিয়াউজ্জামান, এসআই আব্দুল বাতেন, রাশেদ, শোভন কুমার সাহা, কনস্টেবল নজরুলকেও আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্তে তারা অব্যাহতি পান। তদন্তকালে পুলিশের এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা। এ মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৪ জন সাক্ষীর বক্তব্য শুনেন আদালত। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার পর যুক্তিতর্ক শুনানিও শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণা করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ।
এএইচ/এএস