পুলিশ-বিচারকদের উপর হামলা ছিল তার মূল টার্গেট
ধর্মীয় উগ্রবাদী জিহাদে আহ্বানকারী ও বিচারকসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলার পরিকল্পনাকারী মনির আব্দুল রাজ্জাক (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
শনিবার (৫ মার্চ) রাতে রাজধনীর মতিঝিল থানার ফকিরাপুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ১টি মোবাইল ফোন, দেশি-বিদেশি ২টি সিম কার্ড ও ১টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, পুলিশ-বিচারক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর হামলায় ছিল তার মূল টার্গেট। প্রবাসে থাকা অবস্থায় ডিজিটাল মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদপূর্ণ বিভিন্ন পোস্ট ও ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হয় মনির আব্দুল রাজ্জাক (৪০)। পরে সে নিজেই ফেক ফেসবুক আইডি খুলে পরিচয় গোপন রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে অনলাইনে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিল।
রবিবার (৬ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।
মো. আসাদুজ্জামান জানান, সে ফেসবুকে বিভিন্ন উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়। যেমন-সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের ও বিচারকদের টার্গেট করুন। তাদের পরিবার ও তাদের উপর হামলা করুন। ১০ থেকে ১২টা মরলেই কেল্লা ফতেহ।
আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মনির আব্দুল রাজ্জাক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ২০০৭ সালে প্রথমে বাহরাইনে যায় এবং একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে লেবার হিসেবে কাজ করে। প্রবাসে থাকা অবস্থায় সে ডিজিটাল বিন্যাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদপুষ্ট বিভিন্ন পোষ্ট/ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হয়। পরে সে ফেক ফেসবুক আইডি খুলে নিজের পরিচয় গোপন রেখে গাজওয়াতুল হিন্দ নামক একটি ধর্মীয় উগ্র মতবাদী সংগঠনে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে পোস্ট দেয় এবং অন্যদেরকেও এই জিহাদে যোগদানের আহ্বান করে।
মো. আসাদুজ্জামান আরো বলেন, সর্বশেষ সে বাহরাইন থেকে ২০১৮ সালে দেশে আসে এবং ২ মাস পরে আবার প্রবাসে চলে যায়। প্রবাসে বসে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে অনলাইনে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের পরিকল্পনা করছিল।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন গাজওয়াতুল হিন্দে যোগদানের বিষয়ে সকলের দোয়া কামনা করেন যাতে 'গাজওয়াতুল হিন্দ' এর এই যুদ্ধে যেন আল্লাহ তাকে কবুল করেন। তার এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিচারক এবং পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করে ফেসবুকে পোস্ট দেয় এবং তাদের উপর হামলার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে বাহরাইন থেকে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশে চলে আসে ধর্মীয় উগ্র জিহাদী মতবাদপুষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সুযোগের সন্ধানে গোপনে/ছদ্মবেশে ঢাকায় অবস্থান করছিল।
এ ছাড়া, সে নিজে বাহরাইনে তার সহকর্মী পাকিস্তানি নাগরিকের পরামর্শে পাকিস্তানি সেজে ফেসবুকে একটি ফেক ফেসবুক আইডি খোলে, যেখানে সে নিজে পাকিস্তান উর্দু স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনা করেছে বলে স্টাটাস দেয় যাতে অন্যরা তার আইডি দেখে তাকে পাকিস্তানি মনে করে এবং সেই আইডিতে সে রাষ্ট্রবিরোধী ও ষড়যন্ত্রমূলক পোস্ট দেয়।
তিনি বলেন, মনির আব্দুল রাজ্জাক বিভিন্ন সময় ফেসবুকে ফেক পোস্ট দিত। তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি ডিজিটাল আইনে মামলা করা হয়েছে।
কেএম/এমএমএ/