এটিএম বুথের টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত: র্যাব
অভিনব কৌশলে জালিয়াতি করে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত একটি চক্র। এই চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল (৫ মার্চ) রাতে রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, আব্দুর রহমান বিশ্বাস (৩২), মাে. তারেক আজিজ (২৫), তাহমিদ উদ্দিন পাঠান (সােহান) (২৮), মাে. রবিউল হাসান (২৭), হাবিবুর রহমান ইলিয়াস (৩৬), মাে. কামরুল হাসান (৪৩), মাে. সুজন মিয়া (৩১) এবং মাে. আব্দুল কাদের (৪৩)।
এ সময় তাদের থেকে ২টি চেকবই, ১টি এটিএম কার্ড, ৪টি আইডিকার্ড, ১টি স্বর্ণের নেকলেস, ১ জোড়া বালা, ১ জোড়া কানের দুল, ১টি আংটি এবং নগদ ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা জব্দ করা হয়।
রবিবার (৬ মার্চ) কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
খন্দকার মঈন বলেন, এই চক্রটি একটি বেসরকারি ব্যাংকের ২ শতাধিক এটিএম বুথ মেশিন থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত। তারা সবাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল। নিজেরা নিজেদের প্রশিক্ষণ দিত তারা। এরপর প্রতারণা করত।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে র্যাব এটিএম বুথে ডাকাতি, হত্যা ও অবৈধভাবে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের ঘটনায় দেশি বিদেশি বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাংকের অডিটে এটিএম বুথের টাকার বেশকিছু গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও থার্ড পার্টি র্যাবের শরণাপন্ন হন। পরে র্যাব গােয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে র্যাব এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে এবং থার্ড পার্টি পরিবর্তিত হলেও টাকা লােডার ও অন্যান্য কারিগরী দলের কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলশ্রুতিতে র্যাব তদন্ত অব্যাহত রাখে এবং গতরাতে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা পরস্পর যােগসাজশে বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাৎ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আব্দুর রহমান এই সিন্ডিকেটের মূলহােতা।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা অন্যান্যরা তাদের সহযােগী; যারা কন্ট্রোল রুম, লােডিং, কলিং এবং মেনটেইনেন্স এর দায়িত্ব পালন করে থাকে। তারা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিল। তারা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লােড করে থাকে। এই ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লােডার নিযুক্ত রয়েছেন। যারা প্রয়ােজনে বিভিন্ন স্থানে অর্থ পৌছে থাকেন।
এ ছাড়া টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, কারিগরী সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজন নিয়ােজিত থাকতো। গ্রেপ্তারকৃতরা লােডিং ট্রেতে টাকা স্থাপনের সময় ১৯টি ১০০০ টাকার নােটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছে করে জ্যাম করে রাখত।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কোনো ক্লাইন্ট এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে গােপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ঐ পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্সবীনে জমা হতো। পরবর্তীতে সেই টাকা তারা সরিয়ে নিতো। এক্ষেত্রে মেশিনের একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা টাকাগুলাে আত্মসাৎ করতো।
গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রহমানের বারাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সে এই চক্রের মূলহােতা। সে বিগত ৩ থেকে ৪ বছর পূর্বে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিতে চাকরি নেয়। তার সবাই উচ্চ শিক্ষিত।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা দায়িত্বপূর্ণ এলাকা মিরপুর, কালশী, বেনারশিপল্লী, সেনপাড়া, ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকা। সে প্রতিদিন বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
কেএম/এমএমএ/