সিআইডির ইন্সপেক্টর সেজে হাতিয়ে নেয় নারীর গোপন তথ্য
অনলাইনে এক নারী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সংবাদের ফুটেজ ধরে রিপোর্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছিল এক প্রতারক। একটি নারী নির্যাতন মামলার ঘটনায় সেই বাদীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নিজেকে সিআইডি ইন্সপেক্টর মেহেদী হিসাবে পরিচয় দিত। এমন এক প্রতারককে আইনের আওতায় এনেছে সিআইডি। ওই প্রতারকের নাম কামরুল। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত সীল, বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো চিঠির কপি, পাঁচটি ফেইক ফেসবুক আইডি, বিকাশ একাউন্ট ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
ওই নারী ভিকটিমের অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সিআইডি সাইবার টিমের অভিযানে কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন কামরুল। তাকে গ্রেপ্তারের পর সিআইডি বলেছে, কামরুলের মূল পেশা প্রতারণা করা।
ভুক্তভোগীর অভিযোগের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, কামরুল সিআইডি সাইবার এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করে থাকে এমন পরিচয় দিত। প্রথমে সে মামলায় যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বাদীর কাছে আস্থাভাজন হয়।
সিআইডি জানায়, মামলার আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই প্রতারক এবং তাদের ভয়-ভীতি দেখায়। আসামিকে মাদকের অন্য একটি মামলা দিতে হবে বলে বাদীকে হোয়াটসআ্যাপে অভিযোগের একটি ড্রাফ্ট পাঠায়, এর জন্য ৫০০০ টাকাও নেয় সে। এসব কাজের জন্য আরেকজনকে ভুয়া এসপি হিসেবে সাজায় কামরুল। এর পাশাপাশি তাকে দিয়ে বাদীর সঙ্গে কথা বলায়। এসব কার্যক্রম এবং যোগাযোগে বাদীর সঙ্গে বেশ বিশ্বস্ততা অর্জন করেন তিনি।
তারা আরও জানায়, নারী নির্যাতন মামলা প্রমাণ করার জন্য প্রতারক কামরুল বাদীর কাছ থেকে কৌশলে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও নেয়। সরল বিশ্বাসে বাদী সিআইডি অফিসার ভেবে একান্ত গোপনীয় সকল ফুটেজ শেয়ার করে। ফুটেজ পেয়েই প্রতারকের কথাবার্তার ধরণ এবং চেহারা পাল্টে যায়। প্রতারক কামরুল এ কাজের বিনিময়ে মেয়েটির কাছে দুই লাখ টাকা এবং তার সঙ্গে রাত যাপনের অফার দেয়। ওই নারী অবশেষে বুঝতে পারে সে প্রতারকের পাল্লায় পড়েছে। তখন ভুয়া আইডি খুলে বাদীর ছবি ভাইরাল করার হুমকি দেয় কামরুল। রীতিমত চাপে রাখে মেয়েটিকে।
সিআইডির তথ্য মতে, কোনো উপায় না পেয়ে ওই নারী মালিবাগ সিআইডি হেডকোয়ার্টার্সে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে আসে। ইন্সপেক্টর মেহেদী নামের কাউকে খুজে পায় না তিনি। এরপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার কথা শুনে সিনিয়র কর্মকর্তার নোটিশে অভিযোগ নেওয়া হয়। এরপর সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টার বিষয়টি অনুসন্ধান করে এবং আসামিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
সিআইডি আরো জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের সঙ্গে আসামির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। ডিজিটাল আলামতের সূত্র ধরে জানা যায়, দীর্ঘদিন তিনি নিজেকে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নানা জনের সঙ্গে বিশেষ করে মেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। কখনও কখনও তিনি নিজেকে ডিজিএফআই'র কর্মকর্তা বলেও অনলাইনে পরিচয় দিত।
প্রতারক কামরুলের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই দিনের রিমান্ডে এখন সিআইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, প্রতারক কামরুল দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে প্রতারণা করে আসছিল। আমরা ভিকটিমের অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রতারণার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা পাই এবং সিআইডির বিশেষ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কেএম/এসআইএইচ