গ্যাং কালচারের দ্বন্দ্বে জাহিদ হত্যায় গ্রেপ্তার ৪
রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সিনিয়র-জুনিয়র গ্রুপের দ্বন্দ্বে নিহত জাহিদ হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
গতকাল (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর পল্লবী, নারায়নগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. ইফরান ওরফে ডামরু (২৪), মো. ডলার হোসেন ওরফে ডলার (২৫), মো. রাজা হোসেন (২২) ও মো. কোরবান (২৫)।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এ খুনের সঙ্গে মাদকের অপব্যবহারসহ গ্যাং কালচারের প্রবণতা রয়েছে। সেই সঙ্গে চুরি-ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ সম্পৃক্ত।
রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মো. মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেল হক বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে পল্লবী থানা কাঁচা বাজার পেঁয়াজ পট্টি এলাকায় একটি নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। ওই হত্যাকান্ডে নিহত জাহিদ হাসানের বাবা হানিফ খান বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে র্যাব-৪ এ মামলাটি তদন্ত করে।
তিনি আরও বলেন, নিহত জাহিদ হাসান পল্লবী থানার বেনারশী পল্লিতে স্বপরিবারে বসবাস করতেন। সে মূলত পেশায় একজন বাস চালক ছিল, তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে যানবাহন চলাচল সীমিত হওয়ায় পেশা পরিবর্তন করে মাছ ব্যবসা শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে সে বিবাহিত এবং এক কন্যা সন্তানের জনক।
র্যাব-৪ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, নিহত জাহিদ ও তারা একই এলাকার বাসিন্দা। এলাকাটি ননবাঙ্গালী বিহারী ক্যাম্প (জল্লা ক্যাম্প, মুসলিম ক্যাম্প ও মিল্লাত ক্যাম্প) এর আওতাধীন। ওই এলাকায় মাদকের অপব্যবহারসহ গ্যাং কালচারের প্রবণতা রয়েছে। ওই এলাকায় সিনিয়র গ্রুপ ও জুনিয়র গ্রুপ নামে দুইটি গ্রুপ রয়েছে যারা এলাকায় চুরি-ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসায় লিপ্ত থাকে। ওই গ্রুপ দুইটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সার্বক্ষণিক দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত থাকে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, নিহত জাহিদ জুনিয়র গ্রুপের অর্ন্তভুক্ত ছিল এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা সিনিয়র গ্রুপের সদস্য। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় প্রথমে জুনিয়র গ্রুপ সিনিয়র গ্রুপের ইমরান আলীর সঙ্গে মাদক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বাগবিতণ্ডা হলে জুনিয়র গ্রুপের ৫ থেকে ৬ জন সদস্য ইমরান আলীকে চর-থাপ্পর মারেন। ওই খবরটি জানতে পেরে সিনিয়র গ্রুপের প্রধান মো. ইফরান ওরফে ডামরু ও মো. ডলার হোসেন ওরফে ডলারের নেতৃত্বে একই দিন রাত ১০টায় সিনিয়র গ্রুপের ১৫ থেকে ১৬ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র (ছুরি, সুইস গিয়ার, হকি স্টিক, এসএস পাইপ, লোহার রড) নিয়ে কাঁচা বাজার পেঁয়াজ পট্টি এলাকায় অবস্থানরত জুনিয়র গ্রুপের উপর আক্রমণ করে।
মোজাম্মেল হক বলেন, ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মিঠুন, কামরান, ডলার, রাজা ও কোরবানসহ আরও কয়েকজন হকিস্টিক, এসএস পাইপ এবং রড দিয়ে ভিকটিম জাহিদসহ অন্যান্যদের উপর আক্রমণ করে। মিঠুন, ডলার ও কামরানের আঘাতে ভিকটিম জাহিদ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে মামলার প্রধান আসামী মো. ইফরান ওরফে ডামরু তার হাতে থাকা ধারাল সুইস গিয়ার (চাকু) দিয়ে ভিকটিমের পেটে ছুরিকাঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায় এবং ভুড়ি বের হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
ঘটনাস্থলে ভিকটিম জাহিদ ছাড়াও জুনিয়র গ্রুপের সদস্য মো. কামরান (২২) এবং হাসান (২৩) গুরুতর আহত হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিম জাহিদসহ আহতদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহতদের মধ্যে ভিকটিম জাহিদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রেরণ করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, অবশেষে র্যাব-৪ এ মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কেএম/এমএমএ/