স্বামী জেলে থাকায় রিকশা চোরাই চক্রের দায়িত্ব নিলেন স্ত্রী
রাজধানীতে রিকশা চুরি চক্রের পিছনে রয়েছেন এক নারী। এ চক্রের মূল হোতা ওই নারীর স্বামী। চুরির মামলায় তার স্বামী জেলে থাকায় এ দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। চোর চক্রের সদস্যরা তাকে মহারানী বলে ডাকে। স্বামী জেলে থাকায় অতিরিক্ত টাকার নেশায় সে এই চক্রটি পরিচালনা করে আসছিলো। অবশেষে গোয়েন্দার জালে তাদের ধরা পড়তে হয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্যাডেলচালিত রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক তাদের মূল টার্গেট। যাত্রীর বেশে রিকশায় চড়ে রাজধানীসহ আশাপাশের এলাকায় চুরি করান তিনি। যার কারণে অনেক দিনমজুর রিকশা চালকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যার প্রভাব পড়েছে তাদের পরিবারের উপর।
এ চক্রের দলে আছে অসংখ্য দালাল, গ্যারেজ মালিক, ও চোরাই রিকশার ক্রেতারা। দীর্ঘদিন ধরে দলটির নেতৃত্বে রয়েছে এই নারী। সম্প্রতি রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের সদস্য ও মূলহোতা নারীসহ চোরচক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় গোয়েন্দা পুলিশ। মূলত তারা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। একদল জেলে গেলে অন্য দল চুরির কার্যক্রম চলমান রাখে। তবে এবার সবাইকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে গোয়েন্দা।
এদিকে গবেষণা বলছে, রাজধানীতে রিকশা চালকের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। দুই শিফটে মালিকরা রিকশা ভাড়া দিয়ে থাকেন। সেই হিসাবে চালকের সংখ্যা ২২ লাখ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে তিন চাকার এ বাহনটির ওপর।
রাজধানীসহ আশাপাশের এলাকার ৯৬ শতাংশ রিকশাচালকের নিজস্ব রিকশা নেই। মালিকের কাছ থেকে ভাড়ায় রিকশা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তারা। তাই উপার্জনের একমাত্র এই বাহনটি চুরি হয়ে গেলে গুনতে হয় জরিমানা। রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে চোরচক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এই চোরচক্রটির মূলহোতা কুলসুম বেগম। চুরির দায়ে তার স্বামী এখন কারাগারে। তাই চক্রটির দায়িত্ব এখন তার হাতেই। তার স্বামী গত ১৫ বছর ধরে রিকশা চুরির সঙ্গে জড়িত।
চোর, দালাল, গ্যারেজ মালিক ও চোরাই রিকশা ক্রেতা এ চারটি গ্রুপ মিলে চক্রটি। প্রথমে একটি রিকশা নিয়ে চালকসহ ঘুরতে থাকে দুই থেকে তিনজন। টার্গেটকৃত রিকশাটির চালককে নির্দিষ্ট গস্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভাড়া মিটাতে থাকে একজন। কৌশলে রিকশা চালককে ডেকে নিয়ে যায় একজন। বাকি দুজন উধাও হয়ে যায় রিকশা নিয়ে।
প্রতিটি চোরাই রিকশা রাখার জন্য ৩০০ টাকা দিতে হয় গ্যারেজ মালিককে। শুধু প্যাডেলচালিত রিকশা নয়, ব্যটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকও চুরি করে চক্রটি।
পুলিশ বলছে, অধিকাংশ রিকশার নেই কোনো নিবন্ধন। চুরি হয়ে গেলেও হয় না কোনো মামলা কিংবা অভিযোগ। ফলে প্রতিদিন কি পরিমাণ রিকশা চুরি হয় তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তরা বিভাগ) কাজী শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীসহ আশপাশে যেসব রিকশা চলে তার বেশির ভাগের কোনো আইডেন্টিফিকেশন নেই। যার কারণে চুরি হলেও খুঁজে বের করা যায় না।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তরা বিভাগ) বদরুজ্জামান জিল্লু বলেছেন, বেশকিছু সংঘবদ্ধচক্র ঢাকার আশপাশে যেমন আশুলিয়া-সাভার থেকে ইজিবাইক, অটোরিকশা ও প্যাডেলচালিত রিকশা সুকৌশলে তারা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। চুরির সময় চারপাশে নিজেদের লোক থাকে। তারা একজন সাহেব বা ভদ্রলোক সাজে এবং তাদের একটি নিজস্ব রিকশা বা ইজিবাইক থাকে। এরপর তারা চুরি করে কৌশলে পালিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি রিকশা চোরচক্র আমরা ধরতে সক্ষম হয়েছি।
এদিকে পুলিশ জানায়, এসব চোরাইকৃত রিকশা বিক্রি করে এর টাকা চক্রের সদস্যরা ভাগ করে নেয়। জেল থেকে বের হয়ে এসে আবারও চুরির কাজে যুক্ত হয়।
জানতে চাইলে ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি রাজধানীতে এক রিকশা চুরির মূল হোতাকে আমরা আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি, এরপর থেকে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি তৎপর রয়েছি। তবে রিকশা চুরি রোধে চালকদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে।
জানতে চাইলে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান বলেন, ২৫ বছরে হাজারের বেশি রিকশা চুরি চক্রের এক মূলহোতাকে আমরা আইনের আওতায় এনেছি। বর্তমান সে জেলে রয়েছে। সে ১৩ বছর ধরে রিকশা চুরি করতো। এমন অনেক চক্র আছে। এ পর্যন্ত অনেকগুলো চোর আমরা গ্রেপ্তার করেছে তবে, তারা জামিনে বের হয়ে এসে আবারও চোরের সঙ্গে জড়িত হয়। এক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এদিকে, একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিকশা ও অটোরিকশা চুরিরোধে চালকদের অবশ্যই সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।
কেএম/এএস