অনলাইনে জুয়া পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে পুলিশ
অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে যাবে গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, অনলাইনে জুয়ার মাধ্যমে অর্থ চলে যায় দেশের বাইরে। যার কারণে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দেশের স্বার্থে তারা এসব অপরাধের সাথে সম্পৃক্তদের হুঁশিয়ারি করেছেন।
গোয়েন্দা পুলিশ বলেছেন, "যারা এখনও অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত আছেন আপনারা যদি এ খেলা ছেড়ে না দেন তাহলে আপনাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।"
এদিকে, জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় আসার আহ্বান জানিয়ে পুলিশ বলছে, অন্যথায় এ কাজে সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিণতি ভয়াবহ হবে।
এ বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহল মনে করছেন, যারা অনলাইনে জুয়ার সঙ্গে জড়িত তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ চক্রের সদস্যরা খুবই স্মার্ট এবং বিভিন্ন কৌশলে কাজ করে থাকে। তারা মনে করেন, অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত সারাদেশে যারা জুয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, যেহেতু অনলাইনে জুয়া পরিচালনাকারী এজেন্ট ও মাস্টার চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, এ অভিযান চলমান থাকলে অপরাধীরা ভয়ে থাকবে এবং এসব অপরাধ থেকে ফিরে আসতে পারে। তবে, এর জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি ও পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
সম্প্রতি রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় বিশেষ এক অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ অনলাইনে জুয়া (বেটিং) পরিচালনাকারী বাংলাদেশের দুই মাস্টার এজেন্টসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। ওই চক্রকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছে, অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারীদের মাধ্যমে অর্থ চলে যায় দেশের বাইরে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে জুয়াড়িদের উদ্দেশ্যে এসব সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়।
জানা যায়, জুয়াড়িরা এসব কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের মাধ্যমে করে থাকে। এরা ভুয়া ফেসবুক আইডি ও বিদেশি নাম্বারের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে বেটিং সাইডগুলো পরিচালনা করে ও গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে এ সাইটগুলোর ডোমেইন ব্যবহৃত হয়। এসব ব্যাংক একাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক একাউন্টগুলোতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। সারাদেশে এর সংখ্যা অনেক। সবকিছু গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, অনলাইনে জুয়া খেলা এটি সাধারণত ভিন্ন কৌশল। মানুষ বিভিন্নভাবে লোভে পড়ে এসব অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তবে করোনাকালে এর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এই জোয়ার কৌশলে পড়ে অসংখ্য মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব অপরাধ দমনের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা প্রয়োজন। জুয়া পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিলে এসব অপরাধ অনেকটা কমে আসবে।
এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এ চক্রের সদস্যরা ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় লোকাল এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এসব লোকাল এজেন্ট বেটিংয়ে অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে নগদ অর্থের বিনিময়ে প্রতিটি পিবিউ ১৫০ টাকা নিয়ে বিক্রি করে থাকে। এই কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের মাধ্যমে করা হয়।
ডিবির প্রধান বলেন, অনলাইন জুয়া একটা নেশার মতো, এখানে একবার ঢুকলে সে নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, বিটিআরসি এর অনেক সাইট বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে এগুলো পরিচালনা করছে। আমাদের পুলিশের মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। সবাইকে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যারা এখনো অনলাইনে জুয়ার সঙ্গে জড়িত আছেন আপনারা যদি এ খেলা ছেড়ে না দেন তাহলে আপনাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
কেএম/এএস