পাইলট সেজে প্রেম: বেনজিরের পকেটে অর্ধশত নারীর শতকোটি টাকা
ভুয়া পাইলট পরিচয় দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া বেনজির। ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে পরিচয় দিতেন একজন পাইলট হিসেবে। আর এই পরিচয় ব্যবহার করে প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন নিঃসঙ্গ, সিঙ্গেল মাদার এমন নারীদের। তাদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দিতেন নড়াইলের বেনজির হোসেন। পরে বিভিন্ন অজুহাত ও ভুয়া ভিসা দেখিয়ে ওই নারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন।
প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানী ঢাকার এক নারীর করা মামলার পর নড়াইলের ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
সিটিটিসি বলছে, বেনজিরের ফেসবুকে ভুয়া জৌলুসপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে এই প্রতারক নিঃসঙ্গ নারী, সিঙ্গেল মাদারদের টার্গেট করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। পরে বিয়ে ও সপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভনে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন বছরের পর বছর ধরে। প্রথমে বিশ্বাস তৈরি করে, সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রতারক।
বেনজিরকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার এসব তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, শাহিদ হাসান নামে আমেরিকা প্রবাসী এক বাংলাদেশি বিমান চালকের প্রোফাইল হুবহু কপি করে একটি ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করেন বেনজির। প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তিনি নিয়মিত শাহিদ হাসানের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতারক বেনজির ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ ফেলেন, পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। তিনি অডিও কলে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বললেও কখনোই ভিডিও কলে কথা বলতেন না। প্রণয়ের একপর্যায়ে বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ার কথা বলে তার দেওয়া বিভিন্ন নগদ নম্বরে (প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১৯টি নগদ নম্বরের বিষয়ে জানা গেছে) ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেন।
বেনজিরের বাড়ি নড়াইলে হলেও প্রতারণার টাকা ক্যাশ আউট করতেন বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনার বিভিন্ন নগদ ক্যাশ আউট পয়েন্টে। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম ও নগদ নম্বরের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত এনআইডি অন্য ব্যক্তির নামে। ক্যাশ আউট করার সময় প্রতারক বেনজির পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পরে থাকতেন।
ছয় মাসে এক সিঙ্গেল মাদার প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। আসাদুজ্জামান জানান, বেনজিরের ফাঁদে পড়ে ওই নারী ১ কোটি টাকা হারিয়েছেন। অন্য এক নারী দিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। এমন ৫০ জন ভুক্তভোগী নারীর তথ্য পাওয়া গেছে। আরও অসংখ্য নারীর তথ্য মুছে ফেলেছে বেনজির। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন এজেন্ট নম্বর থেকে গড়ে ১৫-২০ লাখ করে টাকা উত্তোলন করতেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান জানান, বেনজির এইচএসসি পাস করে একটা চাকরিতে যোগ দেন। চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায়। তিনি খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা ওই অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজারে তালের শাঁস বিক্রি করতেন। তবে বেনজির খুব মেধাবী ছিলেন। তার বৈধ কোনো পেশা নেই।
এদিকে দৃশ্যমান আয়ের উৎস না থাকলেও নড়াইলে ৫ বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়ি (২ তলা ডুপ্লেক্স ভবন), অনুমানিক ৩ বিঘা জমির ওপর সম্প্রতি কেনা বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় অনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার, নড়াইলে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ভবন; যশোর, সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন, ব্যাংক ব্যালেন্স থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।