প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করতেন তারা!
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের যৌথ অভিযানে রাজধানীর বনানী থেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ভুয়া প্রটোকল অফিসারের পরিচয়ে বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ চক্রের মূল হোতা হরিদাস চন্দ্র ওরফে তাওহীদ ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই চক্রের প্রতারণাসহ নানা অপকর্মের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এনএসআই ও র্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর বনানী এলাকা হতে শ্রী হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস ওরফে তাওহীদ (৩৪) এবং মো. ইমরান মেহেদী হাসান (৩৮) কে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় জব্দ করা হয় ৪টি মোবাইল, জালিয়াতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ডকুমেন্টস এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এডিট করা ভুয়া ছবি।
তাদের ধরার পর র্যাব বলছে, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে তারা! এবং প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ভুয়া প্রটোকল অফিসার সেজে অনেক দিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল এই চক্রটি।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এক শ্রেণির প্রতারক চক্র স্পর্শকাতর ব্যক্তিদের অথবা সমাজের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে বা তাদের প্রটোকল অফিসার, বা বিভিন্ন মন্ত্রীর ভুয়া এপিএস পদবি ব্যবহার করে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাৎ করছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত হরিদাস ওরফে তাওহীদ প্রতারক চক্রের মূল হোতা। তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন অবৈধ উপায়ে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে তার এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করেন। তার আত্মীয়ের মাধ্যমে সেখানকার পঞ্চায়েত প্রধানের নিকট হতে কৌশলে একটি এতিম সার্টিফিকেট গ্রহণ করে এবং সেখানকার স্থানীয় একটি স্কুল হতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে এবং ইলেক্ট্রনিক বিষয়ে দুই বছরের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, আসামি ২০১০ সালে বাংলাদেশে এসে রাজধানীর উত্তরায় পুরনো এসি কিনে মেরামত করে বিক্রির কাজ শুরু করে। এ সময় উত্তরার একটি হাসপাতালের এসি মেরামত বা এসি প্রদানের বিষয়ে তার সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর ২০১৮ সালে একজন সবজি বিক্রেতার সঙ্গে সাবলেট বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে থাকা অবস্থায় তার মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য ২০১৯ সালে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে তার নাম শ্রী হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস পরিবর্তন করে তাওহীদ ইসলাম ধারণ করেন।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত হরিদাস ওরফে তাওহীদ জানায় তিনি তার শ্বশুরের পরিচয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকায় কিছু জমি কেনেন। তার শ্বশুরের মাধ্যমে এলাকার লোকের সঙ্গে নিজেকে একজন বিত্তশালী লোক হিসেবে পরিচিত হন। পাশাপাশি তিনি এটাও প্রচার করতে থাকেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের প্রটোকল অফিসার।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ সময় গ্রেপ্তারকৃত আরেক আসামি ইমরান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। তার বিভিন্ন সহযোগীসহ অন্যান্য ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করে হরিদাসের নিকট নিয়ে আসত। হরিদাস ওরফে তাওহীদ এ সকল ব্যক্তিদেরকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিভিন্ন পদে চাকরি, পদোন্নতি এবং বদলির বিষয়ে আশ্বস্ত করে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করতেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এমএমএ/