মাদারীপুরের চক্র প্রশিক্ষণ দেয় নওগাঁয় ইমো হ্যাকারদের!
ইমো আইডি হ্যাক করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে হ্যাকার চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো.আব্দুল মমিন, মো. রবিউল ইসলাম ওরফে রবি, মো.শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদ, মো. সাব্বির, মো.চাঁন মোল্লা ও মো. আরিফুল ইসলাম। তাদের কাছে থেকে ১২টি মোবাইল ফোন, হ্যাকিং কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ১৯টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।
রবিবার (৬ নভেম্বর) ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশের বাড়ি রাজশাহী ও নওগাঁ জেলায়।
ডিবি জানায়, চক্রটির সদস্যরা নওগাঁ কেন্দ্রিক হলেও তারা ইমো হ্যাকের প্রশিক্ষণ নেয় মাদারিপুরের আরেকটি চক্র থেকে। প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির ইমো আইডি হ্যাক করে লাখ লাখ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল এই চক্রটি। এভাবে তারা গত ২-৩ মাসে ৫০ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
ডিবি আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা অল্প শিক্ষিত হলেও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইমো হ্যাক করায় তারা ছিলো দক্ষ। সর্বোচ্চ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা এই হ্যাকাররা ইমো হ্যাক করার প্রশিক্ষণ নিত মাদারিপুরের একটি চক্রের থেকে। বিনিময়ে তাদের দিতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা।
সোমবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুণ অর রশীদ৷
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মোহাম্মদ হারুণ অর রশীদ বলেন, গত ৯ অক্টোবর রাতে নুরুল ইসলামের বড় ভাই কাতার প্রবাসী কাশেমের ইমো আইডি থেকে একটি মেসেজ আসে। যেখানে বলা হয়, ‘আমার টাকার প্রয়োজন, আমি বিকাশ নাম্বার পাঠাইলে টাকা দিও।'
পরে গত ১০ অক্টোবর দুপুরে নরুল ইসলামের ইমোতে আরও একটি মেসেজ আসে ‘আজকে বিকাশের রেট কত? ২৫ হাজার টাকা পাঠানো যাবে।’ এরপর আরও কয়েকটি মেসেজ ও ভয়েজ মেসেজ আসে। ভিকটিম নুরুল ইসলাম সেই মেসেজের উপর ভিত্তি করে হ্যাকারদের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে তিনবারে (২৫০০০+২৫০০০+ ১৫০০০)=৬৫০০০/= টাকা পাঠায়।
তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে নুরুল তার বড় ভাইয়ের ইমো আইডি বন্ধ পেলে তার ভাবির ইমো আইডি থেকে বড় ভাই মো. আবুল কাশেমকে ৬৫,০০০ টাকা পাঠানোর কথা জানায়।
প্রতিউত্তরে তার বড় ভাই কাতার প্রবাসী কাশেম বলেন, তার ইমো আইডি হ্যাক হয়েছে, আইডিটি তার নিয়ন্ত্রণে নেই। পরে ভিকটিম বুঝতে পারে সুকৌশলে তার কাছ থেকে হ্যাকাররা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একই কৌশল অবলম্বন করে চক্রটি গত তিন মাসে পঞ্চাশ লাখেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রবাসীদের স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের কাছে থেকে।
তিনি আরও বলেন, ইমো হ্যাক করার জন্য যারা প্রশিক্ষণ দেয় তাদের কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুতই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপি’র ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
কেএম/এমএমএ/