প্রশ্ন ফাঁস হয় বিমানের এমডির কক্ষ থেকেই: ডিবি
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষ থেকেই।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষা বাতিল ও সার্বিক তদন্তে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (লালবাগ) বিভাগ। তদন্ত করে ও গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের দেওয়া জবানবন্দিতে স্পষ্ট হয়েছে যে এমডির কক্ষ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। উদ্ধার করা হয়েছে আরও অনেক ব্ল্যাঙ্ক চেক।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, বিমান বাংলাদেশের এমডির কক্ষ থেকে প্রশ্নফাঁস করেছেন জাহিদ নামে একজন অফিস সহকারী। নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে একটি কমিটি রয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এখানে অনেক লোকের চাকরি হওয়ার কথা। তারা দায় এড়াতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির ঘটনায় গত ২১ নভেম্বর ডিবি লালবাগ প্রথম দিনই বিমানবন্দরের কাউলা থেকে আওলাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, এনামুল হক, হারুন-অর-রশিদ ও মাহফুজুল আলম নামে বিমান বাংলাদেশের পাঁচ কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্রের সফট কপি, টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এরপর প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আরও ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. মাসুদ, জাহিদ হাসান, সমাজু ওরফে সোবহান, জাবেদ হোসেন ও জাকির হোসেন।
ডিবির প্রধান হারুন বলেন, গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে ৯ জন প্রশ্নফাঁসে নিজেদের ও অন্যদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা প্রশ্নফাঁসের যাবতীয় অপকর্মের বিবরণ দিয়েছেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, পরীক্ষা কমিটির প্রধান, জিএম অ্যাডমিনের কক্ষে প্রশ্নপত্র রেডি হয়। সেখান থেকে একজন প্রশ্নপত্রের ছবি তোলেন। ২০ নভেম্বর বিমানের লোগো মুছে ফেলে ৮০টি প্রশ্ন টিক চিহ্ন দিয়ে আরও দুজনের কাছে সরবরাহ করে। ওই দুজন মোটরসাইকেলযোগে চলে যায়। আবার ১৯ নভেম্বরের সামারাইজ প্রশ্নের ফটোকপি এমডির অফিস সহকারী জাহিদ হোসেনের দায়িত্বে দেওয়া হয়। তিনি স্মার্টফোন সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ফটোকপির সময় ছবি তুলে সোবহানের কাছে পাঠিয়ে দেন। সোবহান সরবরাহ করেন আরও কয়েকজনের কাছে।
গ্রেপ্তার কোনো আসামির জবানবন্দিতে এমডির নাম এসেছে কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, যাদের দায় আছে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তির স্বার্থে প্রয়োজনে আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এখন পর্যন্ত আমরা বিমানের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের নির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি। আমরা তদন্ত করছি।
গত ২১ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের ১২টি পদে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগে একটি অসাধু চক্র বিমান বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় গত ২৬ নভেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগে তদন্তাধীন।
কেএম/এসএন