জনতা মাল্টিপারপাস: সেই আজাদ অবশেষে আটক
মেহেরপুরে জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে প্রায় সাত হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে আত্মগোপনে থাকা প্রতারকচক্রের মূলহোতা খন্দকার আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার মঈন বলেন, চক্রটি জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে সাত হাজারের বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে 'জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি' নামে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার খন্দকার আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ জামানত হিসেবে গ্রহণ করত। এভাবে ২০১২ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যায়। ২০১৩ সাল হতে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে বৃহদাকারে 'জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড' নামে প্রতিষ্ঠান শুরু করে।
কমান্ডার মঈন বলেন, সহজ শর্তে ব্যবসায়ীদের জন্য মোটা অঙ্কের ও প্রান্তিক মানুষের জন্য ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু করে। গ্রাহকরা 'তফশিলি ব্যাংক' মনে করে তাতে আমানত রাখতে শুরু করেন। অনেক ব্যবসায়ীকে প্রতিষ্ঠানটি মোটা অঙ্কের ঋণ প্রদানের কারনে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকে পড়ে ওই প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন জেলা শহর গুলোতে দৃষ্টিনন্দন ও নামীদামি বাড়ি ভাড়া নিয়ে চাকচিক্যময় অফিস খুলে বসে। মূলত সে পরিবার কেন্দ্রিকভাবে ব্যবসা শুরু করে যেখানে তার স্ত্রী, ছোট ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রী মিলে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করত। এভাবে অল্প সময়ে তারা প্রচুর পরিমান অর্থ জামানত হিসেবে গ্রহণ করতে আত্মসাৎ করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহীসহ প্রতিটি জেলা থেকে অফিস গুটিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আজাদসহ তার পরিবারের তথা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা সবাই গা ঢাকা দিলে বিষয়টি নিয়ে ওই জেলাগুলোতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সর্বস্ব হারানো ভূক্তভোগীরা বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ, প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধনসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে থাকে। ঘটনাটি সারাদেশে প্রচারিত হলে উক্ত জেলাগুলোর সর্বস্তরের মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সংঘটিত ঘটনায় প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে র্যাব জানায়, সে ব্যবসা শুরুর পর থেকে জামানত গ্রহণের পাশাপাশি মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য জামানত প্রদানকারী গ্রাহকদের মুনাফা দেয়ার কার্যক্রমও চালায় তবে ব্যাবসা গুটিয়ে নেয়ার আগে সে প্রদানকৃত অর্থও গুছিয়ে নিতে থাকে। ২০১৭ সালে তার দেয়া হিসাব মতে তার নিকট রক্ষিত গ্রাহকদের সঞ্চয়-আমানতের পরিমান দাড়ায় প্রায় ৫০-৭০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে গ্রাহকদের বিভিন্ন আশা দেখিয়ে তাদের নিকট হতে রক্ষিত সকল জামানতের অর্থ নিয়ে ২০১৭ সালে ঈদুল ফিতর এর ছুটিতে সে তার আঞ্চলিক সকল অফিস গুটিয়ে এবং সকল ফোন নম্বর একযোগে বন্ধ করে দিয়ে ঢাকার উত্তরায় এসে গা ঢাকা দেয়। পালানোর সময় মাঠপর্যায়ে তার প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রদত্ত ঋণের পরিমান ছিল ৩২ লাখ টাকা যা সে আর সংগ্রহ করতে পারেনি।
র্যাবের তথ্য মতে, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেফতারকৃতের সাথে প্রায় আটশতাধিক কর্মী নিয়োজিত ছিল। যাদেরকে কোন প্রকার বেতন প্রদান করা হত না। তাদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে বার্ষিক ১৮-২০% মুনাফার প্রলোভন দেখাত।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কেএম/এএস