মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খলিল গ্রেপ্তার
মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি খলিলুর রহমানকে ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি খলিলুর রহমান গ্রেপ্তার এড়াতে ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করতেন এবং সেই বাসায় একা থাকতেন। এভাবে সাত বছর পালিয়ে থাকার পর অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত কাজ শুরুর পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। দুই বছর পর ২০১৭ সালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর রাজধানীর দক্ষিণখান, তুরাগ ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন ও একাকী অবস্থান করতেন। যোগাযোগের জন্য কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না তিনি। কিন্তু মাঝেমধ্যে পরিবারের সদস্যরা গোপনে তার সঙ্গে দেখা করতেন। তার ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ দিতেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে যুদ্ধাপরাধী খলিলুর রহমানসহ তার ভাই আজিজুর রহমান, একই এলাকার আলমপুর ইউনিয়নের মৃত তরাব আলীর ছেলে আশক আলী, জানিরগাঁও ইউনিয়নের কদর আলীর ছেলে শাহনেওয়াজ এবং একই এলাকার রমজান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার পাঁচটি অভিযোগে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে পাঁচজন আসামির মধ্যে খলিলুর রহমান ছাড়া সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিচারকালীন চারজন মারা যান।
র্যাব জানায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে খলিলের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের চারটিতে মৃত্যুদণ্ড ও একটিতে ১০ বছরের সাজা ঘোষণা করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেপ্তার খলিলুর গত ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরে চন্ডিগড় ইউনিয়নের আল বদর বাহিনীতে কমান্ডার হন।
র্যাবের তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোণার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা থানা এলাকায় অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যায় জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে ২২ জনকে হত্যা, একজনকে ধর্ষণ, একজনকে ধর্ষণ চেষ্টা, অপহৃত চারজনের মধ্যে দুজনকে ক্যাম্পে নির্যাতন, ১৪-১৫টি বাড়িতে লুটপাট ও ৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ রয়েছে।
কেএম/এসএন