স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার!
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানায় শহিদুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগীকে গলাকেটে হত্যা করার ঘটানায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী শাহিন আলমকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার বড়টিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার তার করা হয়।
র্যাবের দাবি, অপরাধের কথা না জানিয়ে ছদ্মবেশে বিয়ে করে আসামি শাহিন। এরপর বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ভিকটিম শহিদুল ও আসামি শাহিন পরস্পর বন্ধু। ২০০১ সালে আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টেসে চাকরির সুবাদে তাদের বন্ধুত্ব হয়। এসময় শাহিন এনজিও প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দেয় শহিদুলকে। ২০০৪ সালে ধামরাই থানাধীন গোয়াড়ীপাড়ায় একটি অফিস ভাড়া নিয়ে 'বাংলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা' নামক একটি সঞ্চয় ও ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তারা। সঞ্চয়, ঋণদান এবং ফিক্সড ডিপোজিট কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। গ্রেপ্তারকৃত আসামী শাহিন ও ভিকটিম শহিদুল সমান অংশীদার থাকলেও ভিকটিম শহিদুল এনজিওটির কর্মচারী এবং সদস্যদের কাছে তার কর্মদক্ষতা ও ভালো ব্যবহারের জন্য খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। প্রতিষ্ঠানে লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছিলো এবং একসময় তাদের অ্যাকাউন্টে সদস্যদের সঞ্চয়ের বেশকিছু টাকা জমা হয়। সেই টাকা ও প্রতিষ্ঠানটির লোভে বন্ধু শহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি আরো বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার পূর্বে আসামী শাহিন তার মামাতো ভাই টাঙ্গাইলের সন্ত্রাসী রাজা মিয়াকে নিয়ে ভিকটিমকে হত্যার পূর্ণ ছক আঁকে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার ২০ মে ২০০৬ তারিখ আসামি শাহিনের জন্য পাত্রীর দেখতে যাওয়ার কথা বলে বন্ধু শহিদুলকে মাইক্রো বাসে তুলে। সন্ত্রাসী রাজা মিয়াসহ আসামি সাহেদ, কুদ্দুস, বিষ্ণু সুইপার রশি দিয়ে গলা পেঁচিয়ে, রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে ভিকটিম শহিদুলকে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে গলা কেটে নিথর দেহ থেকে শহিদুলের মাথা আলাদা করে ফেলা হয়৷
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, ভিকটিমের দেহ নিথর হয়ে গেলে আসামিরা লাশ গুম করে আলামত লোপাট করার পরিকল্পনা করে। আসামিরা কালামপুর, সাটুরিয়া হয়ে নির্জনস্থান বেতুলিয়া ব্রিজের ঢালে নিথর দেহ ফেলে দেয়। আর শহিদুলের মাথা নাগরপুরে জগতলা নামক স্থানে খালের পাড়ে কাদামাটিতে পুঁতে রাখে। ওই হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পরে মাটি খুঁড়ে ভিকটিমের মাথা ও নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় সাটুরিয়া থানায় একটি অজ্ঞাতানামা ব্যক্তিদেরকে আসামী করে সেদিনই একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।
মোজাম্মেল হক বলেন, ভিকটিমের ভাই জিডি করতে গেলে সাটুরিয়া থানায় মাথা ও নিথর দেহের ছবি দেখে শহীদুল ইসলামকে চিনতে পারে।
তখন ওই এনজিওর ২ জন নারী কর্মী’কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় ভিকটিম শহিদুলের সাথে আসামি শাহিনের এনজিওটির মালিকানা নিয়ে বিরোধ ছিল। পরে শাহিনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, ভিকটিমকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। ওই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামী শাহিন ১০ বছর হাজত খেটে ২০১৬ সালে জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘ সময় মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা এবং সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে আদালতে গ্রেফতারকৃত ২ জন আসামি শাহিন আলম ও সাহেদ এবং পলাতক আসামি রাজা মিয়া, আঃ কুদ্দুস, বিষ্ণু সুইপার, রহম আলী ড্রাইভার ও মাইক্রোবাসের মালিক সেলিমসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে৷ আদালত পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তিতে দীর্ঘ বিচারকার্য পরিচালনা করে গত ১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ আসামী শাহিনকে মৃত্যুদণ্ড, আসামী সাহেদ, রাজা মিয়া, আব্দুল কুদ্দুস, এবং বিষ্ণু সুইপারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আসামি শাহিন আত্মগোপনে থাকতে ছদ্মবেশ ধারণ করেন। তিনি রংপুর, আশুলিয়া, পল্লবী, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় পেশা পরিবর্তন করে কখনো ফেরিওয়ালা, গার্মেন্টসের অপারেটর, রাজমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিক, স্যানিটারী মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস