মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলকেসকে ১২ বছর পর গ্রেপ্তার
রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে চাঞ্চল্যকর বাসু হত্যা মামলার প্রধান আসামি আলকেসকে দীর্ঘ ১২ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বরিশাল মহানগরী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
ডিআইজি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. আলকেস, মামলার বাদী চিনু মিয়া ও ভিকটিম বাসু মিয়া (৪৮) একই এলাকার বাসিন্দা। মামলার বাদী চিনু মিয়া ভিকটিম বাসু মিয়ার আপন ছোট ভাই। গ্রেপ্তারকৃত আসামি রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন চটবাড়ী নবাবেরবাগ এলাকার ২০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য। ভিকটিম বাসু মিয়া ও বাদী চিনু মিয়ার চটবাড়ী এলাকায় ১০ শতাংশের একটি পৈত্রিক দখলীয় সম্পত্তি ছিল। জমিটি আজগর আলীর কাছে বাৎসরিক ভিত্তিতে লিজ দেওয়া ছিল। কিন্তু একসময় আসামি আজগর আলী প্রতারণামূলক জাল দলিল করে জমিটি নিজের নামে নিয়ে নেয় এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ২০১০ সালে সমিতির নামে হস্তান্তর করে। এতে করে ওই জমির মালিকানা নিয়ে মামলার বাদী চিনু মিয়া এবং ভিকটিম বাসু মিয়ার সঙ্গে মৎসজীবী সমিতির বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিতর্কিত জমিটি প্রকৃতপক্ষে মূল মালিক চিনু মিয়া ও বাসু মিয়া। সমিতির লোকজনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা জমিটি জোরপূর্বক দখল করে জায়গাটিতে সীমানা প্রাচীর তৈরি করে ফেলে। তখন চিনু মিয়া ও ভিকটিম বাসু মিয়া আসামিদের সঙ্গে বিরোধে না জড়িয়ে সিভিল আদালতে মামলা দায়ের করে। পরে প্রায় দুই বছর পর আদালত বাদী চিনু মিয়া ও বাসু মিয়ার পক্ষে রায় প্রদান করেন। পরবর্তীতে মামলার বাদী এবং ভিকটিম আদালতের রায় পেয়ে ওই জমিতে ২০১২ সালের শুরুতে বিল্ডিং নির্মাণ করা শুরু করেন। প্রথম তলার ছাদ পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়।
তিনি আরও বলেন, বাসু হত্যার দিন (২০১২ সালের ১৪ মে) ভিকটিম বাসু নবনির্মিত বিল্ডিংয়ের ছাদে পানি দেওয়ার জন্য একজন কর্মচারী নিয়ে যান। তখন সমিতির সদস্যরা অর্থাৎ এই মামলার এজাহারনামীয় আসামি আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদর আলী, লেদুসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জন আসামি আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে আক্রমণ করে। আক্রমণের এক পর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামি আলকেস তার কাছে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়েন। একটি গুলি বাসুর মাথার বাম পাশে লেগে ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে বাসু ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই চিনু মিয়া গ্রেপ্তারকৃত আসামি আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জনকে আসামি করে ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আলকেসসহ অধিকাংশ আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন আসামি আলকেস নিজেকে সম্পৃক্ত করে অন্যান্য আসামির নাম উল্লেখপূর্বক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কিন্তু আসামিরা চার মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলে অন্যান্য আসামিরা আদালতে হাজিরা দিলেও আসামি আলকেস জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তিনি এই মামলায় আর কখনো হাজিরা দেননি।
মামলাটি তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে এজাহারনামীয় ১৩ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত একজনসহ মোট ১৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আসামি মো. আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজুসহ মোট পাঁচ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন, এবং আসামি কদর আলী ও লেদু’কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি আলকেস ওই হত্যাকাণ্ডের কথা শিকার করেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/আরএ/