রাজধানীতে মানবপাচার চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার: র্যাব
অভিযান চালিয়ে রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকা হতে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। র্যাব জানিয়েছে, এই চক্র শতাধিক মানুষকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। তারা জনপ্রতি পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং টিকিট ধরিয়ে দেয়। এ পর্যন্ত তারা এই অবৈধ পথে মানুষকে ঠকিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
র্যাব জানায়, শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাতে র্যাব-৩ রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা কামরুল আহম্মেদ (৪২), ও তার তিন সহযোগী মো. খালেদ মাসুদ হেলাল (৩৬), তোফায়েল আহম্মেদ (৩৮) ও মো. জামালকে (৪২) গ্রেপ্তার করে।
এসময় তাদের কাছ থেকে ২৭টি পাসপোর্ট, একটি মনিটর, একটি সিপিইউ, একটি মাউস, একটি কীবোর্ড, একটি ইউপিএস, ১০০ টি ভিসার কপি, ১২৫ টি টিকেট, চারটি মোবাইল ফোন, দুটি ফরম বই কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ এবং একটি প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ র্যাব মিডিয়া সেন্টার কাওরান বাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কয়েকজন ভিকটিমের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে, রামপুরা এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক যুবতীদের নিকট হতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে সর্বশান্ত করছে। সহজ সরল বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ভূয়া ভিসা ও টিকেট বিমানবন্দরে প্রদর্শন করার পর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা ও টিকেট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর হতে ফিরিয়ে দিয়েছে। এরকম কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল এ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ চক্র মৌলভীবাজার থেকে একজন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে রামপুরা এলাকার একটি বাসায় নিয়ে আসে। ওই বাসায় সেই নারীকে আটক রেখে আসামি তোফায়েল তাকে ধর্ষণ করে। ওই নারী মোবাইল ফোনে র্যাবের কাছে সাহায্য চাইলে র্যাবের একটি অভিযানিক দল রামপুরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই নারীকে উদ্ধার করে।’
র্যাব জানায়, উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মো. সাইফুল ইসলাম শান্ত নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সাইফুল যৌতুক বাবদ ভিকটিমের নিকট হতে ধাপে ধাপে ৫ লাখ টাকা নেন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে যৌতুকের টাকা ভিকটিমের পিতা মানুষের নিকট হতে ধার দেনা করে জোগাড় করে তার স্বামীকে দেয়। কয়েকদিন পর ওই পাওনাদাররা টাকার জন্য তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকলে ভিকটিম তার গ্রামের দালাল তোফায়েলের শরণাপন্ন হয়। ভিকটিমের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তোফায়েল ভিকটিমকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদিআরব প্রেরণের প্রলোভন দেখায়। সে প্রলোভনে পড়ে ভিকটিম সৌদি আরব যেতে রাজি হয়। এরপর সৌদিআরব যেতে হলে আরবী ভাষার ট্রেনিং করতে হবে, এই কথা বলে ভিকটিমকে ঢাকায় নিয়ে এসে কামরুলের বাসায় আটক রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভিকটিমকে রামপুরা থানায় প্রেরণ করা হয়। পরে তিনি বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা নিজেদের একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য বলে স্বীকার করেছে। কামরুল এ চক্রের মূলহোতা এবং অন্য তিন জন সহযোগী। তাদের জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই; কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক প্রেরণ করে আসছে। এ ছাড়াও এ চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক যুবতিদের নিকট থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং ভুয়া টিকিট ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এসএ/