২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি মুফতি শফিকুর গ্রেপ্তার
বহুল আলোচিত ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং একাধিক মামলার পলাতক আসামি মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে আব্দুল করিম ওরফে শফিকুল ইসলামকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে র্যাব-২ কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার এ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত বোমা হামলার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার কথা শিকার করেছেন।
তাকে ধরার পর র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত বিগত ২১ বছর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চলতে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় সর্বমোট ৬টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। শফিকুর রহমান একটি গ্রামে আব্দুল করিম নাম ব্যবহার করে ওই এলাকার চরে অবস্থান করে এবং আত্মগোপনে থেকে একটি মসজিদে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি করতেন। অবশেষে তাকে ধরা পড়তে হয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০০১ সালের (১৪ এপ্রিল) রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালীন প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত বোমা হামলায় ১০ জন মৃত্যুবরণ করেন এবং আরও অনেকে আহত হন। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলাসহ অপর একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করা হয়। এ হত্যা মামলাটির বিচারান্তে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অপরদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল-১ এ বিচারাধীন রয়েছে। এই হত্যা মামলার পলাতক সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র্যাব দীর্ঘদিন যাবৎ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং অবশেষে মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, এদিকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একটি জনসভা চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়। ওই গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং প্রায় তিন শতাধিক গুরুতর আহত হয়। উক্ত ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় একটি হত্যা ও হত্যা চেষ্টার সহযোগিতাসহ ২টি পৃথক মামলা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের (১০ অক্টোবর) ঢাকার বিচার ট্রাইবুন্যাল ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও মুফতি শফিকুর রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। গ্রেপ্তারকৃত শফিকুর রহমান ওই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। অপরদিকে একই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মুফতি শফিকুর রহমান বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলারও পলাতক আসামি। এ ছাড়াও ২০০৫ সালের (২৭ জানুয়ারি) হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হন। ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত শফিকুর রহমান কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি বলে জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃত মুফতি শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় সর্বমোট ৬টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাউনে পড়াশোনা করার সময় সেই প্রতিষ্ঠানে মুফতি হান্নানও পড়াশোনা করতে গেলে তার সাথে পরিচয় হয়। পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ভ্রমণে গেলে আফগানিস্তানে থাকাকালীন জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে ‘হরকাতুল জিহাদ (বি)’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করে। পরবর্তীকালে ১৯৯০ সালে দেশে ফেরত এসে সমমনাদের সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ‘হরকাতুল জিহাদ (বি)’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে এবং দাওয়াতের কাজ শুরু করে। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সে ‘হরকাতুল জিহাদ (বি)’ এর প্রচার সম্পাদক ছিল। ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সে হরকাতুল জিহাদ এর আমীর ছিল। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সে হরকাতুল জিহাদের সুরা সদস্য ছিল।
মঈন বলেন, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ সালের (২৭ শে জানুয়ারি) হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থ মন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহতের ঘটনায় সে সম্পৃক্ত ছিল। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রমনা বটমূলে হামলার পর সে আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। অতঃপর ২০০৮ হতে নরসিংদীতে একটি মাদ্রাসায় অবস্থান করে আত্মগোপনে চলে যায়।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শফিকুর রহমান নরসিংদী থাকাকালীন নিজের পরিচয় গোপন করে “আব্দুল করিম” ছদ্মনামে পরিচয় দিতেন। এ ছাড়া তিনি ঐ এলাকায় আব্দুল করিম নাম ব্যবহার করে অত্র এলাকার চরে অবস্থিত একটি মসজিদে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি করতেন। ইমামতির আড়ালে তিনি মানুষকে ধর্মের নামে বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা প্রচার করতেন। সে অত্যন্ত কৌশলে মাঝে মধ্যে ভিন্ন স্থানে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করত। বিগত ২১ বছর তিনি এভাবেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/টিটি