যেভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত শুটার রিয়াজ চক্র
হত্যা মামলাসহ ১৫ টি মামলার আসামি নারায়ণগঞ্জ এর শীর্ষ সন্ত্রাসী রিয়াজ বাহিনীর মূলহোতা রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজকে তার ৪ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, রিয়াজের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী দল এলাকার বালু ভরাট ও মাটি কাটার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাক প্রতি নির্ধারিত হারে চাঁদা নিয়ে থাকে। চাঁদা না দিলে ত্রাস সৃষ্টির জন্য হামলা, আক্রমণ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অবৈধভাবে জমি দখলের জন্য সে ভাড়ায় তার দল নিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাছাড়াও সে উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে তাদেরকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত করত। এসব অপকর্মের কারণে আগেও তারা গ্রেপ্তার হয়। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
বুধবার (৬ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এবং সোনারগাঁ এলাকা থেকে রিয়াজ বাহিনীর পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বাহিনীর প্রধান রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজ (২২), মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা (২৩), মারুফ হোসেন মুন্না (২৩), মোহাম্মদ সেলিম (২৩) ও মোহাম্মদ মাহবুব মিয়া (২৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৩টি ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড গুলি, ৫টি দেশীয় ধারালো অস্ত্র, একটি মোটরসাইকেল ও ৬০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার ও বালু ভরাটে চাঁদা না দিলে কাজকর্ম বন্ধ করে দিতো রিয়াজ বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া, বাড়ি বা বিল্ডিং করার সময় চাঁদা না দিলে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করত। এছাড়া ভুলতা এলাকায় বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এসব অপকর্মের কারণে এর আগেও তারা গ্রেপ্তার হয়। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ চক্রের ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে। শুটার রিয়াজ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে তারই বড় ভাই আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী শওকতের হাত ধরে। তখন সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে শওকত নিহত হয়। এছাড়া তার আরেক ভাই রয়েছে মোহাম্মদ আলী। সে বর্তমানে পলাতক রয়েছে।
খন্দকার মঈন বলেন, পারিবারিকভাবেই সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে পরিচিত তারা। রিয়াজের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই। বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সে ভাড়ায় বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে আসছিল। অস্ত্র কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে রিয়াজের বিরুদ্ধে। হত্যাচেষ্টা, মাদকসহ ১৫টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার অন্যতম সহযোগী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৬টি মামলা রয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের কারণে রিয়াজের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে সে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের ২৯ মার্চ রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় একজন নিহত হন এবং ২০ জন আহত হন। রিয়াজের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে চলতি বছরের ১৫ মার্চ রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে শফিক ও শামীম মল্লিক নামে দুই ব্যক্তিকে অতর্কিত এলোপাতাড়ি গুলি করে তারা। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে ভুক্তভোগী বিদ্যুতের বাড়িতে এসে বিদ্যুতকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এছাড়া ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হন। এসব ঘটনায় মামলা চলমান রয়েছে।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা, রিয়াজ বাহিনীর প্রধান সহযোগী। সে রূপগঞ্জ এর একটি কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করে। আগে সে সবজির ব্যবসা করত। ২০১৯ সালে রিয়াজের সাথে পরিচয় হলে রিয়াজ তাকে তার সশস্ত্র বাহিনীতে যুক্ত করে। সে রিয়াজের সহযোগী হিসেবে কাজ করত। রিয়াজ বাহিনীর অবৈধ অস্ত্র সে বিভিন্ন ব্যক্তির হেফাজতে রাখত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি ও বিস্ফোরক আইনে রুপগঞ্জ থানায় ৬টি মামলা রয়েছে।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার মারুফ হোসেন মুন্না রিয়াজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সে সোনারগাঁও এর একটি বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করে। সে সোনারগাঁও এলাকায় মাটি কাটার ব্যবসা করত। মাটির ব্যবসা করতে গিয়ে ২০২১ সালে সে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেয়। মাদক সংগ্রহ, সরবরাহ ও অস্ত্র সরবরাহের কাজে সে রিয়াজকে সহযোগীতা করত। তার নামে রূপগঞ্জ থানায় ২টি মাদক মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার মো. মাহবুব মিয়া রূপগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ডিগ্রী ৩য় বর্ষ পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে রূপগঞ্জ এলাকায় ইট বালুর ব্যবসা করে। ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেয়। সে রিয়াজের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মো. সেলিম সোনারগাঁও এর একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০১৬ সালে সে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যায় এবং মসজিদে কার্পেট বিছানোর কাজ করত। কিছুদিন আগে সে দেশে ফিরে এসে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস