ছদ্মবেশে ব্যাংক ডাকাতি চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ৩
প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন ছদ্মবেশে ব্যাংক ডাকাতি ও স্বর্ণালংকার লুটকারী চক্রের মূলহোতা রাজা মিয়াসহ তিনজনকে মুন্সিগঞ্জ ও বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সোমবার (৪ এপ্রিল) র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর দুটি আভিযানিক দল মুন্সিগঞ্জ ও বরিশালে অভিযান পরিচালনা করে এ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলায় রাঙাপরী জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকান থেকে প্রায় ৩০০ ভরি স্বর্ণ লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাঙাপরী জুয়েলার্সের মালিক আবুল কালাম ভূঁইয়া ভাষানটেক থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে র্যাব ঘটনার বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন ঘটে যাওয়া লুটের ঘটনা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে আসামি শনাক্তের কাজ এবং গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।
তাদের গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে, এ চক্রের সদস্যরা প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন ছদ্মবেশে ব্যাংক ডাকাতি ও স্বর্ণালংকার লুট করে আসছিল। অবশেষে গোয়েন্দা জালে তাদের ধরা পড়তে হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ সব তথ্য জানান।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. কাউসার হোসেন অরফে বাচ্চু মাস্টার (৪২), মো. রাজা মিয়া (৫৪), মো. মাসুদ খান (৪২)। এ সময় উদ্ধার করা হয় লুট করা ১৯.৭০ গ্রাম স্বর্ণ ও নগদ তিন লাখ ২৯ হাজার ১৮০ টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা স্বর্ণের দোকানে ডাকাতিতে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন খান, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা ইতোপূর্বে বিভিন্ন মামলায় র্যাবের হাতে একাধিকবার আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে। এই চক্রটির অপরাধের ধরণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, তারা প্রথমে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদপত্র ইত্যাদি ব্যবহার করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তাদের লক্ষ্যবস্তু দোকানগুলো মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে যোগদান করে বা দোকান ভাড়া নেয়। পরবর্তীতে স্বর্ণালংকার লুট করার পর তারা আত্মগোপণে চলে যায় ও নিজেদের মধ্যে সর্বপ্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা কিছুদিন পর নতুন লক্ষ্যবস্তু ঠিক করার জন্য পুনরায় যোগাযোগ করে।
তিনি আরও বলেন, একই পদ্ধতিতে তারা ২০১৪ সালে ব্রাক ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার ভল্ট ভেঙে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা লুট করে। এই ঘটনায় তারা ব্যাংকের পাশের একটি ঘর একটি এনজিও’র নামে মিথ্যা পরিচয়ে ভাড়া নেয়। ভল্ট লুটের ০১ সপ্তাহ আগে থেকে স্ক্রু ড্রাইভার ও শাবল দিয়ে দেয়াল কেটে ব্যাংকের ভল্টে ডুকে ওই টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে র্যাবের অভিযানে রাজা মিয়াসহ ৭ জন গ্রেপ্তার হয়। ওই ঘটনায় রাজা মিয়া ০৩ বছর কারাভোগ করে। একইভাবে তারা ২০১৮ সালে সিদ্ধিরগঞ্জে দুইটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে ৪৫৫ ভরি স্বর্ণ ও ২ লক্ষ টাকা লুট করে। পরবর্তীতে র্যাবের অভিযানে তারা তিনজন গ্রেপ্তার হয় এবং কারাভোগ করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা ২০২০ সালে ডেমরার হাজী হোসেন প্লাজায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে ২৩০ ভরি স্বর্ণ ও ১.৫ লাখ টাকা লুট করে। ওই ঘটনার আনুমানিক দুই মাস পূর্বে এই চক্রের তিন সদস্য মিথ্যা পরিচয়ে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানির গার্ড হিসেবে মার্কেটের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে যোগ দেয়। এতদিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে তারা গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম ছিল।
র্যাব জানায়, তারা সংঘবদ্ধ ব্যাংক ডাকাতি ও স্বর্ণালঙ্কার লুট চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। গ্রেপ্তাররা সবাই বিভিন্ন পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে পারস্পারিক যোগসাজসে দেশের বিভিন্ন স্থানের স্বর্ণের দোকান লুট, ব্যাংক ডাকাতি ও বিভিন্ন মার্কেটে লুট করে আসছেন।
কেএম/আরএ/