টিপু হত্যাকাণ্ড: র্যাবের সন্দেহের তালিকায় স্ত্রী
মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে স্ত্রী ডলি, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও ক্যাসিনো খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ করছে গোয়েন্দারা।
হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে, মুসা মূলত এ হত্যার মূল আসামি। তিনি টিপুকে হত্যা করার জন্য ১৫ লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন।
র্যাব বলছে, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বেশ কিছু লোক জড়িত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আরও ভালো কিছু তথ্য বের হতে পারে। গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তবে, সেগুলো তদন্তের স্বার্থে বলা যাচ্ছে না।
গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও ক্যাসিনো খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া জড়িত রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সেটারও তদন্ত চলছে।
সূত্রটি জানায়, মুসার সঙ্গে এ হত্যায় জড়িত রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী টিপুকে খুন করা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
টিপু হত্যার বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, ক্যাসিনো সম্রাট, খালেদ ও টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি এ হত্যাকাণ্ডের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। এজন্য টিপুর স্ত্রীকে র্যাব-৩ এ মামলার সার্বিক বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে।
র্যাব জানায়, মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টিপুর সঙ্গে খুনিদের বিরোধ চলছিল। এছাড়া ২০১৩ সালে রাজধানীর গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে খুন হওয়া যুবলীগ নেতা মিল্কির সহযোগী ছিলেন গ্রেপ্তাররা। মিল্কী হত্যায় টিপু জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করতেন গ্রেপ্তাররা। এসব বিভিন্ন দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই টিপুকে মূলত হত্যার পরিকল্পনা করে তারা।
টিপু হত্যার সঙ্গে যুবলীগ নেতা ক্যাসিনো সম্রাট, খালেদ ও টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলিকে গোয়েন্দা সন্দেহের তালিকায় রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র। সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে হত্যাকাণ্ডটি রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে। তবে এই হত্যার পেছনে রয়েছে আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন মুসা। মুসা দেশ থেকে খুনি ভাড়া করে খুনের আগেই দুবাই চলে যান এবং সেখানে বসে তিনি সেটাকে বাস্তাবায়ন করেন। পরিকল্পনাকারী মুসা ছাড়া মতিঝিল এলাকা নিয়ন্ত্রণে অনেকেই এ হত্যার সঙ্গে ডড়িত রয়েছে। তবে, ক্যাসিনো সম্রাট, খালেদ ও টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত আছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে গোয়েন্দা সন্দেহের তালিকা তারা এড়িয়ে যেতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, টিপুকে হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন মুসার উপর দায়িত্ব আসে টিপুকে হত্যার। তিনি বলেন, এ ঘটনার ১২ দিন আগে পরিকল্পনা করে মুসা দুবাই চলে যান। সেখানে বসে তিনি খুনি নিয়োগ করেন। শুরু থেকে এ হত্যার পরিকল্পনাকারী মুসার নাম পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজানপুর এলাকার ব্যস্ত সড়কে গুলি করে হত্যা করা হয় জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। খুনিদের এলাপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান প্রীতি নামে এক কলেজছাত্রী। ঘটনার পরদিন টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। পরে এ ঘটনার আসামিদের ধরতে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অবশেষে এ মামলার বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তবে এ ঘটনার মূল আসামি দেশের বাইরে থাকায় তাকে ধরতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কেএম/আরএ/