ঘরে ঢুকে দুই সন্তানের সামনে মাকে হত্যা
এসি সার্ভিসিংয়ের নামে বাসায় ঢোকে খুনিরা
সবুজবাগ দক্ষিণগাঁও বেগুনবাড়ী এলাকার নিজ বাসায় সন্তানদের সামনে হত্যার শিকার তানিয়া আফরোজ মুক্তাকে (২৮) শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) সার্ভিসিংয়ের নামে ডাকাতি করতে আসা লোকজন হত্যা করেছে বলে ধারণা করছেন তার স্বামী মাইনুল ইসলাম। বাসার আলমারি থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার সময় তা দেখে ফেলায় মুক্তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা।
শনিবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর সবুজবাগের একটি বাসায় দুই শিশুসন্তানের মুখ বেঁধে রেখে তাদের মা তানিয়া আফরোজ মুক্তাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। শনিবার দিবাগত রাতে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ মুক্তার মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
রবিবার (২৭ মার্চ) ঢামেক হাসপাতাল মর্গে মুক্তার মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বামী মাইনুল ইসলাম। তিনি ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজের ইলেক্ট্রো মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসেবে চাকরি করেন। ৮ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন তানিয়াকে। তাদের মায়মুন (৪) ও তানভিরুল ইসলাম (১০ মাস) নামে দুটি সন্তান রয়েছে।
মাইনুল ইসলাম বলেন, শনিবার বিকেল ৪টা ৫২মিনিটে তানিয়া তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিল, এসি সার্ভিসিংয়ের জন্য বাসায় কয়েকজন লোক এসেছেন। তখন স্ত্রীর ফোনের মাধ্যমেই তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
ওই ব্যক্তিরা বলেন, ‘দেড়মাস আগে আপনাদের এসি সার্ভিসিং করে দিয়ে গেছি। তাই আবার আসলাম, সার্ভিসিং করা লাগবে কিনা তা জানতে। ’উত্তরে মাইনুল বলেন, এখন সার্ভিসিং লাগবে না, পরে প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করা হবে। তখন স্ত্রীকেও বলেন তাদের বিদায় করে দিতে। এর পর রাতে মুগদা হাসপাতালের পরিচিত একজন তাকে ফোন দিয়ে জানান, তার ছেলে তানভিরুল হাসপাতালে ভর্তি। বিষয়টি জানার জন্য তখন তিনি স্ত্রী তানিয়ার ফোনে ফোন করেন। কেউ রিসিভ না করায় পরে বাড়িওয়ালাকে ফোন করলে তিনি বাসায় আসতে বলেন। এরপর রাতে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় এসে স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পাই।
মাইনুল বলেন, আমার সন্দেহ ওই ব্যক্তিরা তানিয়াকে ভুল বুঝিয়ে বাসায় ঢুকে এসি সার্ভিসিং করছিল। কারণ তিনি রাতে বাসায় গিয়ে এসির কাভার খোলা অবস্থায় দেখতে পান। তারা এসির কাজ করার সময় হয়ত আলমারি খুলে সেখানে কাপড় ও অন্য জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করছিল। তখন তানিয়া দেখে ফেলায় তারা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। আলমারিতে জামা-কাপড়ও ছড়ানো ছিটানো ছিল।
এদিকে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন সবুজবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিনা আউয়াল। সুরতহালে তিনি উল্লেখ করেন, নিহত তানিয়ার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে, ডান কানের নিচে কাটা ক্ষত, মাথার মাঝখানে আড়াই ইঞ্চি পরিমাণ ও মাথার পিছনের অংশে ডান কানের লতি থেকে বাম কান পর্যন্ত ১১ ইঞ্চি পরিমাণ কাটা, ডান কাঁধের পেছনে সাড়ে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ কাটা ক্ষত রয়েছে।
সবুজবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আজগর আলী জানান, নিহতের স্বামী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। তাছাড়া পুলিশও প্রাথমিকভাবে জানতে পারে এসি মেরামতের নাম করে কয়েকজন বাসায় ঢুকেছিল। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে সবুজবাগ দক্ষিণগাঁও বেগুনবাড়ি মাস্টার গলির মজিবর রহমানের বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে তানিয়ার মরদেহ এবং তার ছেলে-মেয়েকে হাত-পা বাঁধা ও মুখে স্কচটেপ পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
তানিয়ার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। বাবার নাম মিস্টার মিয়া। তানিয়ার শিশু ছেলে তানভিরুল মুগদা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
আরও পড়ুন : ঘরে ঢুকে দুই সন্তানের সামনে মাকে কুপিয়ে হত্যা
এএইচ/এপি/আরএ/