আ.লীগের নেতা টিপু ও শিক্ষার্থী হত্যা
পেশাদার খুনি শুটারদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। এসময় দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়, যার কারণে রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
এ ঘটনায় আসামিদের ধরতে নড়েচড়ে বসেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, এ হত্যার খুনিদের ধরতে অভিযানে নেমেছে র্যাব-পুলিশ-সিআইডি।
আজ শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে ঢাকাপ্রকাশের সঙ্গে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কথা হয়। তারা জানান, এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের সনাক্তের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
জানা যায়, আসামিদের ধরতে পুলিশ, র্যাব, সিআইডি ও গোয়েন্দাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম এটি নিয়ে কাজ করছে।
যা বলছে সিআইডি
জানতে চাইলে সিআইডি সদর দপ্তরের বিশেষ পুলিশ সুপার মর্যাদায় এক কর্মকর্তা বলেন, গতকাল রাজধানীর শাহজাহানপুরে যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে সেটা নিয়ে সিআইডি কাজ করছে। আসামিদের ধরতে বিভিন্ন আলামত নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
সিআইডি সদর দপ্তরের আরেক পুলিশ সুপার বলেন, এটি একটি বড় ধরণের হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনার তদন্ত চলছে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, সিআইডি ছাড়াও র্যাব, থানা পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম কাজ করছে। আমি মনে করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার মোটিভ উন্মোচন ও শুটারদের সনাক্ত করে আইনের হাতে সোপর্দ করা সম্ভব হবে।
যা বলছে পুলিশ
আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, টিপু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে এ ঘটনার তদন্ত চলছে যেকোনো সময় আসামিরা গ্রেপ্তার হবে।
জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের (এআইজি) এক কর্মকর্তা বলেন, শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দুটি হত্যাকাণ্ড জড়িত। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে অনেক তথ্য এসেছে। সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, সবকিছু সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে, আশা করি দ্রুত সময়ে এ ঘটনার সঙ্গে পেশাদার শুটার যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে এবং তাদের গ্রেপ্তারের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
এ বিষয়ে কথা হয় ডিবি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্থান এবং তার আশেপাশে আমরা তদন্ত করে দেখেছি। একজন পেশাদার শুটার ছাড়া এমন হত্যাকাণ্ড সম্ভব না। আমরা ওই শুটারকে খুঁজছি। আমরা বসে নেই তাকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। খুনিকে যে কোনো ভাবে ধরা হবে।
একাধিক পুলিশের কর্মকর্তা জানান, কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে সেই এলাকার সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১২টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্তারিত খুনিদের ধরে হয়তো জানা যাবে।
আ.লীগের নেতা টিপু হত্যা নিয়ে যা বলছে র্যাব
র্যাব বলছে, আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু এবং শিক্ষার্থী সামিয়া প্রীতির হত্যার ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঘটনার বেশ কিছু আলামত ও তথ্য নিয়ে খুনিদের ধরার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে র্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকাপ্রকাশকে বরেন, অনাকাঙ্খিত এধরণের গুলির ঘটনায় ইতোপূর্বেও র্যাব গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুত সময়ে তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত খুনিদের আইনের আওতায় আনা হবে খুব শিগগিরই।
তিনি বলেন, গতরাতের গুলিতে নিহতের ঘটনায় আমরা বেশ কিছু ফুটপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছি। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। বেশ কিছু মোটিভও আমরা হাতে পেয়েছি। সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। ঘটনায় শুটারদের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সনাক্তের চেষ্টা চলছে। খুব কম সময়ের মধ্যে আশা করি আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
নিহত টিপু ছিলেন যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যা মামলার আসামি
রাজধানীর শাহজাহানপুরে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং এক কলেজছাত্রী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার আসামি ছিলো সে। রাজধানীর শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ৩ নম্বর ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন টিপু।
স্থানীয়রা বলছে, ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই মামলার আসামি ছিলেন জাহিদুল ইসলাম টিপু। এছাড়া তার নামে ২০১৬ সালে বাবু হত্যার আরেকটি মামলা রয়েছে।
যে ভাবে খুন হন শিক্ষার্থী প্রীতি?
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জাহিদুল মাইক্রোবাসে করে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। টিপুকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে নিহত হন প্রীতি টিপুর গাড়ির কাছেই দুটি রিকশায় ছিলেন প্রীতি ও তার বন্ধু সুমাইয়া।
ঢামেক হাসপাতালের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) আব্দুল্লাহ খান বলেন, শাহজাহানপুর থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছিল। এদের মধ্যে এক নারী ও এক পুরুষ মারা গেছেন। গুলিবিদ্ধ আরেকজন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সে মোটামুটি ভালো আছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, গুলিবিদ্ধ টিপু, প্রীতি ও আহত মুন্নাকে গতরাত সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসক টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। মুন্নাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ঘটনার পরপর সংশ্লিষ্ট থানায় জানাই। পরে থানা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে।
জানতে চাইলে নিহত সামিয়া আফরান জামাল প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, বিচার কার কাছে চাইবো? এখন কি দেশে বিচার আছে? আমরা এ বিষয়ে মামলা করব না আল্লাহ বিচার করবেন।
কে এই টিপু?
নিহত টিপু মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলা সদরের ফতেপুর ইউনিয়নে। তিনি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। এছাড়া তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা ইসলাম ডলির স্বামী।
জানা গেছে, নিহত জাহিদুল শাহজাহানপুর ঝিলপাড় মসজিদের পাশে একটি বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকতেন। আর প্রথম স্ত্রী দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন অন্য বাসায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিপু সম্প্রতি আওয়ামী লীগ থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তিনি ঠিকাদারির কাজ করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, ঠিকাদারি ব্যবসায় কোনো দ্বন্দ্ব থেকে এই খুনের ঘটনা ঘটতে পারে।
টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি দাবি করেছেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
এদিকে গোয়েন্দারা বলছে, এ বিষয়টি নিয়ে, র্যাব, পুলিশ, সিআইডি, থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম কাজ করছে। তারা মনে করছেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার মোটিভ উন্মোচন ও শুটারদের সনাক্ত করে আইনের হাতে সোপর্দ করা সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের সবুজবাগ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মনতোষ বিশ্বাস বলেন, নিহত টিপু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ডলির স্বামী। এছাড়া তিনি মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই ঘটনায় খুনিদের গ্রেপ্তার করতে আমরা বিভিন্ন অভিযান চলমান রেখেছি।
সহকারী কমিশনার বলেন, এটি নিয়ে সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় কাজ করছি আমরা। হত্যার তদন্তে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে নিহতের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, জাহিদুল ইসলাম টিপুকে কয়েক দফা হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর অনেকবার নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তাকে হত্যা করার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল তারা। আজ তারা সফল হয়েছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
জানতে চাইলে জানতে চাইলে শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্ল্যা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এ ঘটনায় নিহত টিপুর স্ত্রী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার ধারা ৩২৬/৩৪ নম্বর-১৮। তবে, এ অভিযোগে সুনির্দিষ্ট কারো নাম উল্লেখ করেননি। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে বেশ কিছু আলামত আমাদের কাছে রয়েছে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আমরা অভিযান চলমান রেখেছি।
কেএম/