চাকরির সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি
সাক্ষাত্কারের বিষয়টি অনেকের কাছে অত্যন্ত ভীতিকর। তবে নিজেকে ভালোমতো প্রস্তুত করতে পারলে সহজেই তা অতিক্রম করা সম্ভব। সাক্ষাত্কারের জন্য প্রস্তুতির অর্থ আপনি প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করেছেন এবং আপনার লক্ষ্য এবং যোগ্যতার পরীক্ষা দেওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে আপনি উপনীত হচ্ছেন। এই পর্যায়ে আপনি যদি অন্যদের তুলনায় নিজেকে বেশি যোগ্য হিসেবে তুলে ধরতে পারেন তাহলে সফলতার আসনে আপনিই অধিষ্ঠিত হবেন।
চাকরির সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি হিসেবে কোন কোন বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে তা নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন। আসুন দেখে নেওয়া যাক প্রস্তুতির মূল বিষয়বস্তু গুলো-
চাকরির বিবরণ পর্যবেক্ষণ
নিয়োগকর্তার দেওয়া চাকরির পুর্ণাঙ্গ বিবরণ ভালোভাবে পড়তে হবে এবং সে সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। নিয়োগকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় উল্লেখ করেছেন সে বিষয়গুলোতে নজর দিন। আপনি যত বেশি এই বিবরণগুলোর সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন, তারা তত বেশি দেখতে সক্ষম হবেন যে আপনি যোগ্য। সাক্ষাত্কার জুড়ে আপনাকে কোন ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাস করা হতে পারে বিবরণ থেকে সে সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
নিজের যোগ্যতা বিবেচনা করা
আপনি কেন চাকরি চান এবং কেন আপনি যোগ্য তা সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা থাকা উচিত। সুযোগের প্রতি আপনার আগ্রহ এবং কেন আপনি সেরা ব্যক্তি তা ব্যাখ্যা করার জন্য আপনাকে যথেষ্ট প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা
আপনি যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন সে সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিষ্ঠানের কার্যবলী, অবদান ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা আপনাকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রাখবে। এ ধরনের প্রস্তুতি আপনার মনোবল দৃঢ় রাখতে যথেষ্ট সহায়ক হবে। আপনার বিচলিত ভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তরে প্রস্তুত থাকা
সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় প্রায়ই সাধারণ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়। এক্ষেত্রে অনেকেই একই ধরনের উত্তর দেন। এক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতি একটু ভিন্ন ও যুক্তি সঙ্গত হওয়াই শ্রেয়। আপনার নিজের মতো করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রাসঙ্গিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। বুদ্ধিমত্তার সহিত এমনভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন, প্রশ্ন কর্তা যেন অন্যদের তুলনায় আপনার সম্পর্কে ভিন্নভাবে চিন্তা করে।
শারীরিক ও মানসিক সাবলীলতা
অনেকেই সাক্ষাৎকারে এমন ভয় পেয়ে যান যে স্বাভাবিক কোনো কথাই বলতে পারেন না। ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এধরনের ভয় ও সঠিকভাবে কথা বলতে না পারা প্রার্থীর প্রতি একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। যা চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাকেই ক্ষীণ করে। সুতরাং সাবলীলভাবে কথা বলতে পারাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি শরীরি অভিব্যক্তি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কথা বলার সঙ্গে শরীরি অভিব্যক্তি মিলিয়ে উপস্থাপন সর্বদাই অন্যদের তুলনায় আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
বিচক্ষণতার পরিচয়
প্রশ্ন কর্তা অনেক সময় জটিল প্রশ্ন করতে পারে। সে ব্যাপারে মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। যেকোনো ধরনের জটিল প্রশ্নের উত্তর বুদ্ধিমত্তার সহিত দেওয়ার চেষ্টা করুন। নানা রকম অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে এনে উত্তর জটিল করবেন না। এতে আলোচনার পরিধি বেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সাবলীলভাবে প্রাসঙ্গিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। যদি উত্তর ভালোভাবে দিতে না পারেন, দুঃখ প্রকাশ করে আপনার অপারগতা প্রকাশ করুন। আপনি উত্তর জানেন এমন ভাব প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকুন।
ভালোভাবে চর্চা
আপনার বন্ধু বা পরিবারের কারো সঙ্গে সাক্ষাৎকার দেওয়ার চর্চা করুন। এতে আপনার জড়তা দূর হবে এবং ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন। অনুশীলন ক্লান্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু বারবার সাক্ষাতকারের চর্চার অভিজ্ঞতা আপনাকে আরও আত্নবিশ্বাসী করে তুলবে এবং আপনাকে সঠিক ধারণা দিতে সাহায্য করবে। জোরে জোরে আপনার প্রশ্ন ও উত্তরগুলো অনুশীলন করুন। আপনি হয়তো দেখবেন যে একটি উত্তর শ্রুতিকটূ শোনাচ্ছে বা কথা বলার সময় আপনি যা চান তা প্রকাশ করে না, তাই এটি আপনাকে আপনার উত্তরগুলো পরিমার্জিত করার এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে গেঁথে রাখার সুযোগ করে দেবে।
জীবনবৃত্তান্ত প্রস্তুত রাখা
আপনার জীবনবৃত্তান্ত ভালোভাবে প্রস্তুত করুন। বর্তমান সময়ে আবেদনপত্রের ধরনেও নানা পরিবর্তন এসেছে। আপনার আবেদনপত্র সাধারণ কিন্তু স্মার্ট করে প্রস্তুত করুন। সাক্ষাৎকারে যাওয়ার সময় জীবনবৃত্তান্তের কয়েক কপি আপনার কাছে রাখুন। যাতে করে প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর কাছে আপনি তা উপস্থিত করতে পারেন। আপনার জীবনবৃত্তান্তের প্রতিটি দিক সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখুন। আপনার নিজের বিষয়ে যদি আপনি নিজেই ভালো কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পারেন তাহলে প্রশ্ন কর্তার কাছে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পোশাক নির্বাচন
পোশাক ব্যক্তিত্বের স্বাক্ষর। সুতরাং মার্জিত ও রুচিশীল পোশাক পরার চেষ্টা করুন। ফরমাল পোশাক নির্বাচনে গুরুত্ব দিন। এক্ষেত্রে সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট নির্বাচন করতে পারেন। আপনার পোশাক যে অত্যন্ত দামী হতেই হবে তা কিন্তু নয়। পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা ও রুচিশীলতা দিকে নজর দিন। মনে রাখবেন আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি।
চুলের স্টাইলের বিষয়ে সতর্কতা
চুলের বিষয়টি পোশাকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মাথার চুল মাঝারি রাখার চেষ্টা করুন। এমন কোনো ডিজাইন করবেন না যে তা দেখে প্রশ্ন কর্তার মনে বিরূপ কোনো প্রভাব ফেলে। তাই মাথার চুলের বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। চুলের ধরনও আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক বটে।
নিজের উপর ভরসা রাখা
সফলতার জন্য নিজের উপর বিশ্বাস রাখা জরুরি। মনোবল দৃঢ় রাখার চেষ্টা করুন। কখনো ঘাবড়ে যাবেন না। সাহসিকতার সঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিন। নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সাক্ষাৎকারের পরিবেশ নিজের অনুকূলে আনার চেষ্টা করুন, যাতে প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আপনি দিতে পারেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে ভদ্রতার সঙ্গে অপারগতা প্রকাশ করুন।
পেশা জীবনে প্রবেশকালে আপনাকে এ ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হতেই হবে। সফলতার সঙ্গে এ ধাপ অতিক্রম করতে হলে জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি এ ধরনের ডেমো পরীক্ষার বেশি বেশি চর্চা করুন।
এসএন