বঙ্গবাজারে পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড: সাবেক মেয়র তাপসসহ ৩০ জনের নামে মামলা
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পরিকল্পিত নাশকতার আলামত বেরিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভোররাতে ঘটে যাওয়া এই অগ্নিকাণ্ডে পুরো মার্কেটসহ আশপাশের তিনটি মার্কেট পুড়ে নিঃস্ব হয় শত শত ব্যবসায়ী। সম্প্রতি এ ঘটনার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলাটি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী কামাল হোসেন রিপন। এতে মোট ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।
তদন্তে জানা গেছে, ঘটনার রাতে দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে বঙ্গবাজারের আদর্শ ইউনিটের ফটকে এসে টর্চলাইট নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে দ্রুত সেখান থেকে দৌড়ে মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই দুই যুবকই আগুন লাগিয়ে চলে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য আলামত বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত নাশকতা।
১৯৯৫ সালের অগ্নিকাণ্ডের পর লোহার পাত ও কাঠ দিয়ে নির্মিত এই মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০১৯ সালে ডিএসসিসি এটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে নতুন বহুতল মার্কেট তৈরির পরিকল্পনা নেয়। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সময় মার্কেট ভাঙার চেষ্টা করলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে তা সফল হয়নি।
পরে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হয়ে পুনরায় নতুন ভবন তৈরির উদ্যোগ নেন। তিনি ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও ব্যবসায়ীরা মার্কেট না ছাড়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। তাদের আশঙ্কা ছিল, দোকান ছেড়ে দিলে তারা আর জায়গাটি ফিরে পাবেন না।
২০২৩ সালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিট- বঙ্গ, গুলিস্তান, মহানগর এবং আদর্শ মার্কেট সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আশপাশের এনেক্সকো টাওয়ার এবং ইসলামিয়া মার্কেটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, তাদের সরাতে না পেরে সিটি করপোরেশন এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে।
আগুন লাগার পর পরই ডিএসসিসি নতুন বহুতল মার্কেট নির্মাণের ঘোষণা দেয়। তবে সরকারের পটপরিবর্তনের পর এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
৫০০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাইনুল ইসলাম পুলক জানান, নিবিড়ভাবে মামলার তদন্ত চলছে। আসামিদের ধরতে পারলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ সংগ্রহ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, বহুতল মার্কেট নির্মাণের লোভে তাদের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করা হয়েছে। তারা সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন।
এই মামলা ও তদন্তের মাধ্যমে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আসল কারণ এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনার প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।