ঢাকায় কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি
ছবি: সংগৃহীত
কয়েকদিনের টানা বর্ষণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অলিগলি-রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। দেশের বেশকিছু এলাকায় ফসলের ক্ষেতে হাঁটুপানি জমেছে। নগর-মহানগরীর ব্যস্ততম সড়ক সংলগ্ন ফুটপাতে থইথই পানি। কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানি ড্রেন উপচে কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে। ফলে শ্রমজীবীদের পাশাপাশি পেশাজীবী মানুষের কর্মচাঞ্চল্যে ভাটার টান ধরেছে।
এদিকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও দেখা দিয়েছে মন্দা। মার্কেট, বিপণি-বিতান ও বিভিন্ন শপিংমলে সাধারণ বেচাকেনা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। টানা বৃষ্টিতে পাড়া-মহল্লার দোকানেও আগের মতো বিক্রি নেই।
টানা বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশে লাখ লাখ দিনমজুর কর্মহীন হয়ে পড়েছে। নিম্ন্নআয়ের এসব মানুষ গচ্ছিত সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেঁচে থাকার তাগিদে কেউ কেউ রিকশা-ভ্যান কিংবা ঠেলাগাড়ি চালিয়ে দু’মুঠো অন্ন সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তবে বৃষ্টিতে ভিজে এসব কাজ করতে গিয়ে এক-দু’দিন পরই জ্বর-ঠান্ডাসহ নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়ে পরিবারের উপার্জনক্ষম এসব মানুষ উল্টো তাদের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শ্রমজীবীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, টানা বৃষ্টির কারণে শুধু সাধারণ দিনমজুররাই নয়, বিভিন্ন পণ্যের ফেরিওয়ালা, ফুটপাতের হকার এবং দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা নানা পেশার অন্তত ৫০ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সংকটাপন্ন এ পরিস্থিতিতে শহুরে শ্রমিকদের অনেকেই গ্রামে ফিরে গেছেন।
তবে শহুরে শ্রমিকদের চেয়ে গ্রামের শ্রমিকরা আরও বেশি দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। সুনামগঞ্জসহ বেশকিছু এলাকায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই কয়েকদিনের টানা বর্ষণ তাদের কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।
সেখানকার বেশিরভাগ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে দেশের বেশিরভাগ গ্রামের অবস্থাও একইরকম। বৃষ্টি থামলে কবে নাগাদ কাজ পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পেটপুরে দু’মুঠো ভাত খেতে পারবে তা এখন তাদের কাছে দুরাশা হয়ে উঠেছে।
এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীর কোথাও যানবাহনের সংখ্যা কম আবার কোথাও লেগেছে যানজট। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে জলজটের। ফলে আষাঢ়ের ভারী বর্ষণে নগরবাসীকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
থেমে থেমে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিতে বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমেছে। বিপুলসংখ্যক সিএনজি অটোরিকশা এসব রাস্তা পার হওয়ার সময় ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে আছে। মেকানিক ডেকে তা সারাতে চালকরা গলদঘর্ম। এসব বিকল যানবাহনে বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। গণপরিবহণ সংকটে অনেকে ছাতা মাথায় দিয়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। রিকশা ও সিএনজি চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
অন্যদিকে ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের ফুটপাতে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হকাররাও পড়েছে ভীষণ বিপাকে। টানা বর্ষণের কারণে গত কয়েকদিন ধরে বেচাকেনা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসা শিকেয় উঠেছে। এর উপর বৃষ্টিতে অনেকের মালামাল ভিজে যাওয়ায় তাদের মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি মৌসুমি অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
এর প্রভাবে মঙ্গলবারও রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবল রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে এবং বায়ুচাপে তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।