ড্যাপ: পর্যালোচনাতে চলে গেল আরও ৭ মাস
নানা ‘সমস্যা’ থাকায় বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) প্রজ্ঞাপন জারি হলেও কার্যকর হয়নি। বরং এখন ড্যাপ রিভিউ বা পর্যালোচনা করছে। ২০ বছর মেয়াদী ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি করতে সময় নেওয়া হয়েছিল সাত বছর। এখন পর্যালোচনাতে গেল আরও সাত মাস। ফলে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে নির্মাণশিল্পে।
নতুন ড্যাপের মেয়াদ ২০১৫ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। অথচ সেটির প্রজ্ঞাপন জারি করতেই লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে সাত বছর। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির পর নানা সমালোচনার মুখে সরকার সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।
এ জন্য আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব, বিএলডিএ, স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠনসহ নানা সংগঠনের কাছ থেকে পর্যালোচনা চাওয়া হয়। অনেক সংগঠন পর্যালোচনা জমাও দিয়েছে। সেই পর্যালোচনার আলোকে এখন ড্যাপ রিভিউয়ে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি পর্যালোচনা করছে।
কমিটির পর্যালোচনার পর সংশোধিত ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তবে সেটা করতে ঠিক কত সময় লাগবে তা কেউ বলতে পারছে না।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা তো চাই তাড়াতাড়ি এগুলো ফয়সালা হোক। কিন্তু দেওয়ার এখতিয়ার যাদের তাড়া দেরি করলে তো কিছু করার নেই।
রিহ্যাবের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের কাছে ড্যাপের উপর পর্যালোচনা চেয়েছিল ড্যাপ রিভিউয়ের জন্য গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি। রিহ্যাব তাদের পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরে একটি পর্যালোচনা ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে। এখন কমিটি অন্যদের প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছে। সবশেষে তারা একটি প্রস্তাবনা দেবে।
এদিকে, এমন পর্যালোচনা স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদদের কাছেও চাওয়া হয়েছিল। তারাও এমন একটি পর্যালোচনা ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে কমিটির কাছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে স্থপতি ইকবাল হাবিব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা কয়েকটি বিষয় সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। এর একটি হলো ফারের (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) মান বাড়ানো। এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। এখন সিদ্ধান্ত হলে বাকিটা বোঝা যাবে।
রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমাদের কাছে পর্যালোচনা চেয়েছিল কমিটি। আমরা আমাদের পর্যালোচনা প্রস্তুত করে জমা দিয়েছি। এখন মন্ত্রিসভা কমিটি পর্যালোচনা তৈরি করছে। সেটা দেখলে বুঝতে পারব তারা আমাদের কথা রেখেছে কি-না।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিন বছর পরপর ড্যাপ রিভিউয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ড্যাপে এও উল্লেখ আছে যে কোনো বিশেষ কারণে বা বাস্তবতা দেখা দিলে এর আগেও রিভিউ বা পর্যালোচনা করা যাবে। সে নির্দেশনার আলোকেই ড্যাপ রিভিউর জন্য কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নতুন ড্যাপে ছোট জমিতে প্ল্যান না দেওয়া, অর্ধেক জমি ছেড়ে দিয়ে নির্মাণকাজ করা, ভবনের উচ্চতা সীমিত করার মতো বিষয় রয়েছে। এর ফলে ফ্ল্যাটের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং মানুষের নাগালের বাইরে আবাসন চলে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশোধনের অপেক্ষায় স্থবির নির্মাণখাত
ড্যাপ সংশোধন হবে এমন আশায় স্থবিরতা বিরাজ করছে নির্মাণ শিল্পে। রাজউকে নতুন ভবনের প্ল্যান পাসের আবেদন প্রায় জমাই হয় না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ক্ষেত্রেবিশেষে রাজউকের কর্মকর্তারাই আবেদনকারীকে বলে দেন যে কয়দিন পরে আবেদন করেন। ড্যাপ সংশোধন হবে।
সম্প্রতি রাজউকের সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়ে দেখা যায়, প্ল্যান পাসের আবেদন তেমন জমা পড়ছে না। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, ড্যাপে যেহেতু ছোট প্লট মালিকরা এককভাবে বাড়ি করতে পারবেন না এমন নির্দেশনা আছে সেই কারণেই প্ল্যান পাসের আবেদন পড়ছে না। ড্যাপ সংশোধনের অপেক্ষায় আছেন এ সব আবেদনকারী। আবাসন ব্যবসায়ীরাও অপেক্ষা করছেন সংশোধনের জন্যই।
২৩ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই আগে জমা দেওয়া প্ল্যানগুলো পাসের হিড়িক পড়ে যায়। আগে জমা দেওয়া প্ল্যনের ক্ষেত্রে যেহেতু নতুন ড্যাপ প্রযোজ্য হবে না তাই তড়িঘড়ি করে প্ল্যান পাসের জন্য তদবির করেন সংশ্লিষ্টরা।
ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারির দিনই নতুন ড্যাপ কার্যকর হয় এবং আগের ড্যাপ (১৯৯৫-২০১০) কার্যকারিতা হারায়। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ড্যাপের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের আগপর্যন্ত ২০১০ সালের ড্যাপের অধীনে যেসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বৈধ বলে গণ্য হবে।
এনএইচবি/আরএ/