বাহাদুর শাহ পার্কে ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ, ফের জনসাধারণের বিক্ষোভ
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে একটি ফুড ব্রান্ডকে ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের জন্য ইজারা দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এতে ক্ষোভ জানিয়ে বেশ কয়েকবার আন্দোলন করেছেন পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। আন্দোলনের মুখে স্থায়ীভাবে ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের কাজ বন্ধ করার ঘোষণাও দিয়েছিল ডিএসসিসি। ডিএসএসির এই নির্দেশনা অমান্য করে ফের স্থায়ীভাবে নির্মাণ করছে ইজারাদার। তারই প্রেক্ষিতে রবিবার (৪ ডিসেম্বর) ২০২২ রবিবার সন্ধ্যা ৬ টায় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দারা ও ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ।
বাহাদুর শাহ পার্কের অভ্যন্তরে কোনরূপ বাণিজ্যিক স্থাপনা মানি না মানবো না, ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের চলমান কাজ, অবিলম্বে বন্ধ কর করতে হবে, সংস্কারের নামে স্মৃতিস্তম্ভে কোন ধরনের পরিবর্তন মানি না, মানবো না সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীরা। মূলত পার্কের অভ্যন্তরে স্থাপনা নির্মাণ, গ্যাসের আগুন জ্বালিয়ে রেস্তোরাঁ চালু করার ফলে গাছ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে এবং হাঁটাহাঁটি পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান ও পরিচালনা করেন সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাহাদুর শাহ্ পার্ক সান্ধ্য ভ্রমণকারী সমিতির উপদেষ্টা এ কে রিয়াজউদ্দীন, মো. কামাল হোসেন, বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক এডভোকেট আব্দুল সাত্তার, আনোয়ার হোসেন, মো. মীরুজ্জামান খান মীরু, অন্যতম সদস্য মো. শাহ্ আলম ভূঁইয়া।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাহাদুর শাহ্ পার্ক প্রাতঃ ভ্রমণকারী সংঘের অন্যতম সদস্য কাজী খসরু, বাহাদুর শাহ্ পার্ক প্রাতঃ ভ্রমণকারী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, বাহাবাহাদুর শাহ্ পার্ক প্রাতঃ ভ্রমণকারী সংঘের অন্যতম সদস্য এডভোকেট ইলিয়াছ, বাহাদুর শাহ্ পার্ক সান্ধ্য ভ্রমণকারী সমিতির মহিলা সম্পাদিকা সামছুন নাহার, সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাহাজানুর রহমান সাজু, কবি-গীতিকার-সুরকার-গণসঙ্গীত শিল্পী ঢালী মোহাম্মদ দেলোয়ার, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রকাশ দত্ত, দপ্তর সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আতিকুল ইসলাম, ছাত্র প্রতিনিধি সোয়েবুর রহমান।
বক্তারা বলেন, পুরান ঢাকার পার্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দি কলেজসহ অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ পুরান ঢাকার মানুষের বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর একমাত্র জায়গা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অযৌক্তিক, অপরিণামদর্শী ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে বাতিল করা হোক। তারা আরো বলেন, জনস্বার্থ বিরোধী এ সর্বনাশা সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয়-এর প্রতি অনুরোধ করেছি। গত ৩১ অক্টোবর স্থানীয় কাউন্সিলরদের (৩৬, ৩৭, ৪২, ৪৩ নং ওয়ার্ড) মাধ্যমে মেয়র মহোদয়কে, ৩ নভেম্বর ঢাকা জেলা প্রশাসক, ৫ নভেম্বর ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য, ৮ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয় ও প্রধান সম্পদ কর্মকর্তার কাছে গণস্বাক্ষরের ফটোকপিসহ স্মারকলিপি পেশ করেছি। এর ধারাবাহিকতায় ১০ নভেম্বর মেয়র মহোদয়ের আমন্ত্রণে সংগ্রাম পরিষদ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঢাকা মহানগরের ১৬ জন প্রতিনিধি তার সাথে সাক্ষাৎ করেন।
প্রতিনিধিবৃন্দের পক্ষ থেকে পার্কের অভ্যন্তরে রেস্তোরাঁ নির্মাণ কাজ বন্ধ, “১৮৫৭ সালের শহীদদের স্মরণে” লেখাটি পুনঃস্থাপন ও পার্কের নিরাপত্তার প্রয়োজনে পার্কের সীমানা বেষ্টনি দেওয়ার দাবি করা হয়। মেয়র মহোদয় আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিসমূহের যৌক্তিকতা স্বীকার করে সেগুলি বাস্তবায়নে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইজারা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ বেদীর মর্যাদা বিনষ্ট করে স্মৃতিস্তম্ভের সামনেই চুলা জ্বালিয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে তা বিক্রি শুরু করেছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং পার্কের গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। পার্কে প্রাতঃ ও সান্ধ্য ভ্রমণকারীদের শরীরচর্চার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খান বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে পার্কের চারিপাশে সীমানা বেষ্টনি নির্মাণ করতে হবে। নচেৎ উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য যদি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার দায় কোন ভাবেই সংগ্রাম পরিষদের চাপানো যাবে না।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পুরান ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সেলিমের মাধ্যমে মেয়র বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এমবি/এএস