‘আশঙ্কা ছিল রোজায় তীব্র যানজট হবে, হচ্ছেও তাই’
প্রতিদিনের যানজটে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি সঙ্গে নিয়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের গন্তব্যে পৌঁছানো যেন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে রোজা অন্যদিকে যানজট, তার ওপর অসহনীয় গরম- সব মিলিয়ে ক্লান্তির শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছেন নগরবাসী।
রবিবার দুপুরের পর থেকে ইফতারের পরও যানজটে স্থবির থাকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক। ফলে বহু মানুষ রাস্তায় ইফতার করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার রমজানের তৃতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবারও যানজটে অতিষ্ঠ ছিলেন নগরবাসী।
এদিকে যানজট নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রাফিক ব্যবস্থা যদি উন্নত না হয়, তাহলে তাদের ব্যবসা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
আজ বুধবারও (৬ এপ্রিল) বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের ভয়াবহতা বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ রমজান মাসে সকাল থেকে একটু যানজট কম থাকে কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যানজট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকার কারণেও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ।
শাহবাগে কথা হয় উত্তরার যাত্রী চিকিৎসক মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আশঙ্কা ছিল রোজায় তীব্র যানজট হবে হচ্ছেও তাই।
মৎস্য ভবনের সামনে কথা হয় সাইফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, রোজা থেকে প্রতিদিন এ যানজট মোকাবেলা করে মিরপুরে (অফিসে) যেতে আর ভালো লাগে না।
আজিমপুর রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, প্রতিদিন আমি খিলগাঁও থেকে এসে এখানে ক্লাস করি। ভোরে বের হতে হয়। তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগে কলেজে আসতে। রমজানের শুরু থেকেই প্রচুর যানজট লেগে থাকে রাস্তায়। মনে হয় গাড়ি চলে না।
বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর গুলশান-বনানী, মহাখালী, সাতরাস্তা, বাড্ডা, রামপুরা, বিজয় স্মরণী, জাহাঙ্গীর গেট, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, বাংলামোটর, মতিঝিলসহ বিভিন্ন স্থানে যানজট লক্ষ করা গেছে। এ যানজটের কবলে পড়ে অসংখ্য কর্মজীবীরা কর্মঘণ্টা নিয়েও ব্যাপক ঝামেলায় পড়েছেন।
রমনা ট্রাফিক জোনের ইনস্পেক্টর সংগ্রাম দেবনাথ বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ ও মগবাজার এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত গাড়ির চাপ ছিল বেশি। দ্বিতীয় ধাপে বিকেল ৩টার পর শুরু হয়। ট্রাফিক পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাইদুর রহমান খান বলেন, মানুষ ট্রাফিক আইন মানছে না, এতে নগরীতে যানজট বাড়ছে। প্রশাসন চাইলেই সবাইকে ট্রাফিক আইন মানতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু যানজট নিয়ে প্রশাসনের যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই।
গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আগারগাঁও থেকে সকালে বাসে উঠে ৩ ঘণ্টায় কারওয়ান বাজারে অফিসে পৌঁছেছি। গরম ও জ্যামে বসে থাকতে আমাদের কেমন লাগে তা প্রশাসনের লোকেরা বুঝবে না। কারণ তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে এসি চলে। তাই ভোগান্তি সব সাধারণ মানুষের কপালেই লেখা।
আবির নামে আরেক বাসযাত্রী বলেন, প্রতিদিন যানজটে সাধারণ মানুষের এত কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু যানজট নিরসনে সরকারের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সড়কে ফিটনেস, লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া যানবাহনও চলছে। এতে ট্রাফিক পুলিশের কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই।
ট্রাফিক পুলিশ বলছে, অন্তত চারটি কারণে রাজধানীতে যানজট বেড়েছে। ফার্মগেট থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ের এ রাস্তায় এমনিতেই সকালের দিকে তীব্র চাপ থাকে। এরপর সেই সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি।
বেশ কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তায় যানজট বাড়ার জন্য কয়েকটি বিষয়কে তারা দায়ী করছেন। সকালে একই সময়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেওয়ায় গাড়ির চাপ বাড়ছে। সিএনজি স্টেশনগুলো সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্যাস নেওয়ার জন্য দিনের বেলাতেই গাড়িগুলো রাস্তায় বের হচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীর কিছু রাস্তায় উন্নয়নমূলক কাজ চলার কারণেও যানজট বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা।
সম্প্রতি অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম ঈদ ও রমজানকে কেন্দ্র করে জনগণের চলাচল নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশকেও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। থানা পুলিশকে টহল বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি যানজট।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা ডিএমপি কমিশনারের কথায় আস্থা রাখতে চাই। আমরা চাই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এবার স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে, একই সঙ্গে মার্কেটে ক্রেতাদের চাপ থাকবে। এসব বিষয়ে আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা বেশি জোর দিয়েছি। ট্রাফিক ব্যবস্থা যদি উন্নত না থাকে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হবে।
কেএম/এসএন