সংকট না থাকলেও ব্যবহারযোগ্য পানি দিতে ব্যর্থ ওয়াসা
পানির জন্য আগের মতো সেই হা-হা-কার নেই। তবে ব্যবহারযোগ্য পানি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে রাজধানীবাসীর। এজন্য ঢাকা ওয়াসাকেই দুষছেন নগরবাসী। তবে নগরবাসীর এ অভিযোগ একেবারেই মানতে নারাজ ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি বাসাবাড়ির পানির ট্যাংকি অপরিষ্কার থাকায় পানিতে দুর্গন্ধ বা নোংরা পানি আসে।
দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে রাজধানীতে আগের মতো পানির সংকট নেই তবে ব্যবহারযোগ্য পানি দিতে ব্যর্থ ওয়াসা।
রাজধানীর পূর্ব রামপুরা এলাকার বাসিন্দা অমিয় দত্ত ভৌমিক থাকেন ১০৯/২ হাইস্কুলের গলিতে। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, শুধু আমার বাসা না। আমি যেখানে থাকি তার আশপাশে অন্তত ৪-৫টি ভবনের পানিতেই দুর্গন্ধযুক্ত পানি। পানির কল ছাড়লেই কখনো কালো পানি কখনো ঘোলা পানি। ভালো পানির দেখা মেলে মাঝে মাঝে। সেই পানি ফুটিয়েও খাওয়া যায় না। আবার রান্নাসহ অন্যান্য কাজেও এ পানি ব্যবহার করা যায় না।
বাসার পানির ট্যাংকি পরিষ্কার না থাকার কারণে নোংরা পানি আসে- ওয়াসার এমন বক্তব্য চরম অসত্য বলে দাবি করে অমিয় বলেন, আমার বাসার পানির ট্যাংকি ২ মাস আগে পরিষ্কার করেছি। তারা যেটা বলছে অসত্য কথা বলছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওয়াসার এমডিকে যদি এ পানি খাওয়াতে পারতাম তাহলে বোঝানো যেত কেমন পানি তারা সাপ্লাই দিচ্ছে। পানির দাম তো কম নিচ্ছে না। প্রতি মাসে ঠিকই বিল দিতে হচ্ছে অথচ আমি বাহির থেকে পানি কিনে পান করছি। ওয়াসা এখন নতুন ব্যবসা শুরু করেছে ড্রিকিং ওয়াটার পাম্প করেছে, সেখান থেকে ৪০ পয়সা দরে পানি কিনে পান করছি।
একই অভিযোগ করেন তাজমহল রোডের বাসিন্দা শিশির চৌধুরী। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আমার বাসা তাজমহল রোডের সি ব্লকে। আমার ফ্ল্যাটে যে পানি পাই সেই পানি অধিকাংশ সময় প্রচুর ময়লাযুক্ত। খাবার পানি না হয় বাইরে থেকে আনি কিন্তু গোসলের পানি কীভাবে ব্যবস্থা করব? সমস্যাটা কতদিনের জানতে চাইলে তিনি বলেন, বহুদিন ধরেই সমস্যা। হঠাৎ হঠাৎ পরিষ্কার পানি আসে।
তবে ওয়াসাকে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। এবিষয়ে শিশির চৌধুরী বলেন, কাকে কী বলব? ওয়াসার লাইনের পানি যদি এত খারাপ হয়, কাউকে বলে তো কিছু হবে না। তারা এসে দেখে যাক। আমার বাসার রিজার্ভার পরিষ্কার, আমি নিয়মিত পরিষ্কার করাই।
তাদের এ অভিযোগ মানতে নারাজ ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (টেকনিক্যাল) এ কে এম শহীদ উদ্দিন। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আমি এরকম কোনো অভিযোগ পাইনি। আমাকে জানতে হবে ঘটনা কী? নিশ্চই কেউ পানির লাইন ফাটিয়ে ফেলেছে। সে কারণে ময়লা পানি ঢুকে। ওয়াসার দোষ তো নয়। কোথাও হয়তো ম্যানহোলের কাছাকাছি থেকে চোরাই লাইন নিয়েছে। চোরাই লাইন নিতে গিয়ে আকামটা করে তারা। আমরা কেন ভাঙা লাইন বসব? আমরা কখনোই ময়লা পানি দেই না। ভালো না হলে পানি দেই না। কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেন ময়লা পানি দেব? হয়তো তারা রাতের অন্ধকারে চোরাই লাইন নিয়ে এটা ঘটিয়েছে।’
রাজধানীবাসীর জন্য ঢাকা ওয়াসা প্রায় ৯০০টি পাম্প রয়েছে। এসব পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তলন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পুরা ঢাকা শহরে পানি সাপ্লাই দেয় ওয়াসা। এ ছাড়া সংকট দেখা দিলে তার জন্য ডিপ টিউবয়েল রয়েছে। পাঁচটি ট্রিটমেন্ট প্লান্টও রয়েছে। প্রতিদিন রাজধানীর চাহিদা ২৬০ কোটি লিটার। ওয়াসার পানি উত্তোলনের সক্ষমতা রয়েছে ২৬৫-২৭০ কোটি লিটার।
এসএম/এসএন