১১ মাসেও চিহ্নিত হয়নি ডা. সাবিরার হত্যাকারী
২০২১ সালের ৩১ মে রাজধানীর কলাবাগানের একটি বাড়ির চার তলার ফ্ল্যাট থেকে ডা. সাবিরার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ১১ মাসেও হত্যার কারণ বা হত্যাকারী চিহ্নিত হয়নি বলে পিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পিবিআইয়ের ওই সূত্রটি জানায়, ডা. সাবিরা রহমান লিপিকে খুন করা হয়েছে এমনটা ধারণা করা হলেও। খুনের কারণ কিংবা হত্যাকারীর বিষয়ে এখনও তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
মৃতদেহ উদ্ধারের সময় সাবিরার শরীরে জখম ও পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। ৪১ বছর বয়সী এই চিকিৎসক গ্রীন লাইফ হাসপাতালে সনোলজিস্ট ছিলেন। তিনি ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দুই তরুণীকে ‘সাবলেট’ দেন। তাদের একজন প্রথম সাবিরার লাশ দেখেন। অন্যজন সেসময় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন।
মামলাটির তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, এ মামলার তদন্তকাজ চলছে। কিছু দিনের মধ্যেই তথ্য প্রমাণ নিয়ে এই নারী চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উদঘাটন করা হবে।
তথ্য মতে, ২০০৩ সালে প্রথম স্বামী ডা. উবায়দুল্লা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর ২০০৫ সালে সামছুদ্দিন আজাদ নামে এক ব্যাংকারের সঙ্গে দ্বিতীয়বার ঘর বাঁধেন ডা. সাবিরা। দুই সংসারে সাবিরার দুই সন্তান রয়েছে। তারা তাদের নানির বাসায় থাকে। তবে বর্তমান স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় সাবিরা আলাদা থাকতেন।
আরও জানা যায়, সাবিরা যেখানে থাকতেন সেখানের ভাড়াটিয়াদের রাত ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরতে হয়। তবে হত্যার দিন রাতে ওই বাসার নিরাপত্তায় থাকা দারোয়ান ব্যক্তিগত কাজে বাহিরে যান। সাবিরা বাসায় ফেরেন রাত সাড়ে ১২টার পরে। এদিকে ওই চিকিসৎকের সঙ্গে সাবলেটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এক তরুণীও সাবিরা খুনের সপ্তাহখানেক আগ থেকে সকালে হাঁটতে বের হতেন। তিনি সেদিনও সকাল ৬টায় বেরিয়ে যান আর ফিরে আসেন ৯টায়। তিনিই প্রথম আগুন লাগার কথা জানান।
ওই বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার ভাষ্য, রাতে আগুন লাগলে আশপাশের ভাড়াটিয়াসহ বাসার লোকজনের জানার কথা। কিন্তু তারা কিছুই টের পাননি। এ ছাড়া রাতে আগুন লাগালে সকাল ৯টা পর্যন্ত তা জ্বলন্ত থাকার কথাও না। তবে এ বিষয়ে বাসার দারোয়ানসহ ভাড়াটিয়ারা জানান, তারা এসে আগুনের ধোয়া দেখে নিজেরা পানি ঢেলেছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশকে খবর দিয়ে আনেন।
পুলিশ ও ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক উভয়ের পক্ষ থেকে সেসময় বলা হয়, চিকিৎসক সাবিরাকে হত্যা করা হয়েছে মধ্য রাতে। তাহলে একই ফ্ল্যাটে সাবলেটে থাকা ওই তরুণী কেন জানতে পারলেন না সেই প্রশ্ন ছিল অনেকের।
পিবিআই বলছে, এ ঘটনায় সাবিরা হত্যায় তার মামাত ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল বাদী হয়ে মামলা করেন। তিনিও সেসময় সাবলেটের ওই তরুণীর দিকে সন্দেহ করেন। যদিও তিনি মামলা করেন অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে।
এ বিষয়ে রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল বলেন, এই খুনের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকা তরুণী বা অন্য কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে আমাদের সন্দেহ।
পিবিআই বলেছে, তদন্তের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রকৃত হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে পারবে তারা। আশা করছি সাবিরা হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করবে তারা।’
জানতে চাইলে পিবিআই ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ডা. সাবিরা রহমান লিপি হত্যার এ মামলায় অনেক বেশি অগ্রগতি হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যে এ ঘটনার আসল তথ্য বের করা হবে এবং কেউ জড়িত থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জানা যায়, গত ১২ মার্চ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এসে নিহত ডা. সাবিরার ফুফাত ভাই মজুমদার জুয়েল ও ছেলে আহম্মেদ তাজোয়ার বাসা থেকে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র সব নিয়ে গেছে। এর আগে পুলিশের সঙ্গে এসে সাবলেটের এক তরুণী তার জিনিসপত্র নিয়ে গেছে।
তথ্য বলছে, ‘ডা. সাবিরা বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় স্বামী কানাডা প্রবাসী বলেছিল। নিহত চিকিৎসক সাবিরা তেমন কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। তিনি নিজেই বাজার সদাই করতেন। অধিকাংশ সময় অর্ডার দিয়ে খাবার আনতেন। এ ছাড়া খুব বেশি সময় বাসায়ও থাকতেন না। সাবিরা হত্যার পরে ওই বাসায় যায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও র্যাব। ওই সময় আলামত সংগ্রহ করেন সংস্থাগুলো। এর মধ্যে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ (ফিল্টার) ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে আশায় ছিলেন তারা। এখন ফিঙ্গার প্রিন্টই এই হত্যাকাণ্ডের শেষ ভরসা, বলছে তদন্তকারী সংস্থা।
জানা গেছে, এ হত্যাকাণ্ডের এগারো মাস অতিবাহিত হয়েছে। আগামী ৮ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদনের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
কেএম/টিটি