ডিএসসিসি-বুখারেস্টের মধ্যে ‘সিস্টার সিটিজ’ সমঝোতা স্মারক সই
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টের (থার্ড ডিস্ট্রিক্ট) মধ্যে দেশের প্রথম ‘সিস্টার সিটিজ’ সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগরভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে দুই দেশের দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে এ সই হয়।
ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং বুখারেস্টের (থার্ড ডিস্ট্রিক্ট) মেয়র রবার্ট সোরিন নেগোইতা নিজ নিজ করপোরেশনের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে দুই দেশের দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে পর্যটন শিল্পের বিকাশ, সাংস্কৃতিক বিনিময়, যানজট নিরসন ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কারিগরি তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়, শিল্প-বাণিজ্যের বিকাশ এবং বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি রচিত হলো।
সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমাদের লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, তারা মসজিদ, জাতীয় শহিদ মিনারসহ অসংখ্য স্থাপনা রয়েছে যেগুলো পর্যটক আকর্ষণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উৎসব, ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং জনগণের আন্তরিকতা সহজেই দেশি-বিদেশি পর্যটককে মুগ্ধ করতে যথেষ্ট। তাই এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের প্রাণ সঞ্চার হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
পর্যটন শিল্পের বিকাশে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমাদের ঐতিহাসিক স্থাপনার সংখ্যা প্রচুর। সেসব স্থাপনা আমাদের পর্যটন শিল্পের বিকাশে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই, আমরা সেগুলোকে পর্যায়ক্রমে পুনরুজ্জীবন দানে কার্যক্রম শুরু করছি। এরই অংশ হিসেবে আমাদের নর্থব্রুক হলের সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সিস্টার সিটিজ এর ধারণা বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে এই প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করা হলো জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, সিস্টার সিটিজ এর ধারণা একেবারে নতুন না হলেও খুব বেশি পুরোনোও নয়। ডিএসসিসি বুখারেস্টের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে নতুন আরেকটি দিগন্ত উন্মোচিত করল। এই সমঝোতা স্মারক সই দু'দেশের বাণিজ্যিক ও পর্যটন সম্পর্ক যেমন বৃদ্ধি করবে তেমনি অর্থনৈতিক পরিসর বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।
সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে বুখারেস্টের মেয়র রবার্ট সোরিন নেগোইতা বলেন, আমাদের প্রত্যাশা এ সমঝোতার মাধ্যমে উভয় শহরেই কর্মসংস্থান, বাণিজ্য এবং পর্যটনের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া দুই শহরের বাইরেও দুই দেশের মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়বে। এই সমঝোতা পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ তাকে মুগ্ধ করেছে জানিয়ে বুখারেস্টের মেয়র রবার্ট সোরিন নেগোইতা বলেন, বাংলাদেশ খুবই চমৎকার দেশ। এ দেশের মানুষও অত্যন্ত অমায়িক। আমি বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছি, বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশে শুধু রোমানিয়া নয়, ইউরোপীয় পর্যটকের সংখ্যা বাড়াতেও আমি কাজ করব।
এ সময় বুখারেস্টের মেয়র দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গৃহীত কামরাঙ্গীরচরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চলে (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট) বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র বুখারেস্টের মেয়র রবার্ট নেগোইতাকে পারস্পরিক সহযোগিতার স্মারক হিসেবে ‘ঢাকার চাবি’ হস্তান্তর করেন। এ সময় বুখারেস্টের মেয়রকে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহন ‘রিকশা’ এর স্মারকও উপহার দেন ডিএসসিসি মেয়র।
অনুষ্ঠান শেষে মেয়র রবার্ট নেগোইতা ডিএসসিসির মেয়রের নেতৃত্বে বুখারেস্টে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সিতওয়াত নাঈম, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির, করপোরেশনের কাউন্সিলররা, বুখারেস্ট পুলিশের ডেপুটি ডিরেক্টর ভিক্টর নিয়াগু, বুখারেস্টের সিটি ম্যানেজার মারিউস ড্যানিয়েল সিওবিকা, রোমানিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
আরইউ/আরএ/