বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনে লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি!
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনে লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপানের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ নিয়মিত ধূমপান করেন। এতে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন তারা। ধূমপানের বিস্তারে ক্যাম্পাসে চাঙা হচ্ছে সিগারেটের বাজার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলসমূহ এবং আশেপাশের দোকানগুলোতে প্রতিদিন সিগারেট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার টাকার উপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের বিভিন্ন দোকান, টং এবং আবাসিক হলের ক্যান্টিনগুলোতে বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট বিক্রি হয়। আবাসিক হলগুলোতে সিগারেটের ক্রেতা প্রধানত শিক্ষার্থীরাই। পাশাপাশি হলের বাইরে অন্যান্য দোকানগুলোর ক্রেতা একইসাথে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগতরা। বিশেষ করে ক্লাস শেষে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানগুলোতে চলে সিগারেটের রমরমা কেনাবেচা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের ৯টি আবাসিক হলের ক্যান্টিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, হলগুলোতে দৈনিক প্রায় ২৩ হাজার টাকারও বেশি সিগারেট বিক্রি হয়। শিক্ষার্থী এবং হলের স্টাফরা ক্যান্টিন থেকে ওই সিগারেট কিনে থাকে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই ধূমপানে আসক্ত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর। এটিকে ‘আধুনিকতা’ হিসেবে নিয়ে এবং বন্ধু ও বড়ভাইদের দেখে ধূমপানে জড়াচ্ছেন নবীন শিক্ষার্থীরা। অনেকে শিক্ষকদের দেখেও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আবাসিক হলের ক্যান্টিনের কর্মচারীরা জানান, কিছু শিক্ষার্থী যদি ১০ টাকা খাবারের পিছনে খরচ করে, তার বিপরীতে ৩০ টাকা খরচ করে সিগারেটের পিছনে। ক্যান্টিনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সিগারেট।
আরও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়ে ২৪ টি টং ও দোকানে সিগারেট বিক্রি হয়। দোকানগুলোতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৩৭ হাজার টাকার সিগারেট বিক্রি হয়। অন্যদিকে কামাল রঞ্জিত মার্কেটের ৫ টি দোকানে দৈনিক গড়ে প্রায় ৬ হাজার, ফসিলের মোড়ের ৫ টি দোকানে দৈনিক গড়ে প্রায় ১২ হাজার, নদের পাড়ে দৈনিক ১ হাজার এবং শেষ মোড়ের কয়েকটি দোকানে দৈনিক গড়ে সর্বমোট ৯ হাজার টাকার সিগারেট কেনাবেচা হয়ে থাকে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রির মোড়, ডেইরি ফার্ম, ফিসারিজ মোড়ের দোকানগুলোতে সিগারেট বিক্রি হলেও শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কম থাকায় তা গণনায় উল্লেখ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসিলের মোড়ের একজন দোকানি বলেন, বর্তমানে তিনজন ডিলার ক্যাম্পাসে সিগারেট সরবরাহ করে থাকে। তবে সিগারেটের দাম বৃদ্ধির পর থেকে সিগারেট বিক্রি কিছুটা কমে গেছে।
নিয়মিত ধূমপানের ফলে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ছেন বলে জানা গেছে। বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে এখনই সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ধূমপান শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি অপরাধপ্রবণ করে তুলে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারের ডেপুটি চীফ মেডিক্যাল অফিসার ও প্যাথলজিস্ট ডা. আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ বলেন, ‘ধূমপান আমার মতে শুধু এক ধরনের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। ধূমপান একাধারে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সকল ধরনের ক্ষতির কারণ। ধূমপান আসক্তি ধীরে ধীরে মানুষকে অন্যান্য মাদকদ্রব্যের দিকে ধাবিত করে। যেহেতু সিগারেট বিক্রি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়, তাই এগুলোর বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা, ধূমপান না করতে মোটিভেট করা, ধূমপানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো।’