রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হল থেকে আগুনে পোড়া কোরআন উদ্ধার, বিক্ষোভ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হল থেকে আগুনে পোড়া কোরআন উদ্ধার।ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একাধিক হলে থেকে আগুনে পোড়া পবিত্র কোরআন শরিফ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার (১২ জানুয়ারি) ভোর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অর্ধপোড়ানো কোরআন উদ্ধার করেন।
একই সঙ্গে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দেয়ালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লোগো পদ্ম ফুলের ছবিও আঁকা দেখা যায়। সৈয়দ আমীর আলী হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল, মতিহার হল, মাদার বখ্শ হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল থেকে এসব কোরআন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি প্রশাসন। এর মধ্যে ঘটনা তদন্তে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সাত কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি গঠনের আগে উপাচার্য শৃঙ্খলা উপকমিটির সঙ্গে এক জরুরি সভায় ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
হল প্রশাসন ও আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, আজ ফজরের নামাজের সময় পবিত্র কোরআন শরিফ পড়তে গেলে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা দেখতে পান গ্রন্থটির প্রথম দিকের কিছু অংশ পোড়ানো। পরে সকাল ১০টার দিকে সৈয়দ আমীর আলী হলের মুক্তমঞ্চে অর্ধপোড়ানো অবস্থায় পবিত্র কোরআন শরিফ দেখতে পান এক শিক্ষার্থী। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানান শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া বেলা ১১টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের মসজিদে খোঁজ নিয়ে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি পাতা পোড়ানো দেখতে পায় হল প্রশাসন। অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে মতিহার হলের ছাদে অর্ধপোড়ানো এবং ছিন্নভিন্ন অবস্থায় গ্রন্থটি উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা।
আমীর আলী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হারুনর রশীদ বলেন, ‘আজ সকালে হল সুপার আমাকে ফোন করে বলে ছাত্ররা হলে কোরআন পোড়ানো অবস্থায় পেয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ হলে এসে দেখি বিষয়টি সত্য। মূলত ধর্মীয় ইস্যুতে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা করছে। ঘটনাটি আমরা তদন্ত করব। এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি।’
শহীদ হবিবুর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ বাইতুল মোকাদ্দেছুর রহমান বলেন, ‘হলগুলোতে এমন ঘটনার খবর পেয়ে আমি আমার হল মসজিদের মুয়াজ্জিনকে খোঁজ নিতে বলি। খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি দেখতে পান মসজিদে সংরক্ষিত একটি কোরআন শরিফের কয়েকটি পাতা পোড়ানো। পরে আমি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাই।’
ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। পরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে পূর্বপরিকল্পিত। সম্ভবত একই সময়ে একটি গোষ্ঠী রাতের আঁধারে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এখানে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। আমি আমার শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যারা ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য আমরা সফল হতে দিতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ গুলোকে সামনে রেখে পুলিশ, গোয়েন্দাসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে দোষীদের বের করতে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দোষীদের যত শক্ত শাস্তি দেওয়া যায় আমরা সেই ব্যবস্থা করব। দোষী যদি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ হয়ে থাকেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’
এদিকে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘একধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে নতুন পাঁয়তারা করছে একটি কুচক্রী মহল। তারা ভেবেছিল তাদের পরিকল্পনামাফিক শিক্ষার্থীরা একটা সাম্প্রদায়িক পাল্টা হামলা করবে। যাতে ক্যাম্পাসে একটা অরাজকতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের এই ফাঁদে পা দেয়নি। শিক্ষার্থীরা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধতার পরিচয় দিয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়ে বলতে চাই, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুঁজে বের করে ছাত্রত্ব বাতিলসহ বাংলাদেশের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাওসার আল হাবিব। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।