বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপন উপলক্ষে ঢাবি’র প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত
বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে মঙ্গল শোভা যাত্র ও নববর্ষে উদযাপনে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটিসহ ছোট-বড় নানা সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (২৯ মার্চ) বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া, ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ ও বাহিরে কিছু নিয়ম-কানুনও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় জনসমাগম সীমিত রাখতে সকলের প্রতি অনুরোধ করা হচ্ছে। পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিয়ম: ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে অপরাহ্ন ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।
নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
সর্বসাধারণের চলাচলে এই সাময়িক অসুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছে।
যেসব রুটে মানতে হবে: নববর্ষের দিন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগত ব্যক্তিবর্গ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেইট, বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে প্রস্থানের পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট, রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট ও বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ব্যবহার করা যাবে।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা কার্জন হল এলাকার মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে। সভায় নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিং করার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উদযাপনে কমিটি গঠন: বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশে সভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামানকে আহ্বায়ক করে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এই কমিটির সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। সভায়, কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে ২টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এগুলো হচ্ছে- শৃঙ্খলা উপ-কমিটি ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উপ-কমিটি।
১২ সদস্যবিশিষ্ট শৃঙ্খলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী এবং সদস্য-সচিব সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. লিটন কুমার সাহা। এ ছাড়া, ৩২ সদস্যবিশিষ্ট মঙ্গল শোভাযাত্রা উপ-কমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং সদস্য-সচিব সহকারী প্রক্টর মো. নাজির হোসেন খান।
অনুষ্ঠিত বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জনসাধারণকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং মেট্রোরেলের চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নববর্ষ উদযাপনের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানায়।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার, সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য, বিভিন্ন অনুষদের ডীন, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা, ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা, প্রক্টর, অফিস প্রধানরা এবং বিভিন্ন সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএমএ/