হামলার প্রতিবাদসহ তিন দফা দাবিতে ঢাবিতে মানববন্ধন
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের হামলা শিকারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ।
শনিবার (২৫ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয় ওই মানববন্ধন কর্মসূচি। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে চলে ঘণ্টাব্যাপী ওই মানববন্ধন কর্মসূচি।
এ সময় বক্তারা বলেন, গত ১৮ মার্চ দুপুর ২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে শিক্ষার্থী সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে যখন শিক্ষার্থীরা সমাবেশস্থল থেকে ফিরে আসছিলেন তখন পেছন থেকে পুলিশ অতর্কিত হামলা করে শিক্ষার্থীদের উপর। গুরুতর আহত হয় নারী শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী। পুলিশের এহেন আচরণের প্রতিবাদসহ আগের ৩ দফা দাবিতে তাদের মানববন্ধন।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত চাকরি প্রার্থীরা বিগত প্রায় ১০ বছর যাবৎ সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এর পাতা ৩৩ এবং শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে বলা আছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তারা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় যুব নীতিতে ১৮-৩৫ বছর বয়সীদের যুবক বলা হলেও ৩০ বছর হলেই তাদেরকে চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩২ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীতকরণ করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হলেও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি।
পার্শ্ববর্তী দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তারা বলেন, বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর, কোনো কোনো দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশেগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্য ভেদে চাকরিতে আবেদনের বয়স সীমা ৩৫-৪৫ বছর, মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৩৫ বছর, নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদশে এবং পাকিস্তানেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর।
চাকরির অবসরের বয়সসীমা প্রসঙ্গে তারা বলেন, ২০১১ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসরের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি এবং চাকরি শেষে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ স্বাভাবিক চাকরি প্রক্রিয়া ক্ষেত্রে অন্তরায়।
বক্তারা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রায় সকল প্রকার চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি/পরীক্ষা বন্ধ ছিল। পৃথিবীর অনেক দেশ চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর বা তার বেশি থাকার সত্ত্বেও করোনা মহামারির কারণে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আরো ২-৩ বছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ৭১ বার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি লিখিত ভাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য সুপারিশ করলেও কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রার্থীদের প্রাণের দাবি অনতিবিলম্বে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছর এবং অবসরে বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হোক।
এ ছাড়া, চাকরির আবেদন ফি সর্ব্বোচ ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে (১ম শ্রেণিতে ২০০ টাকা, ২য় শ্রেণিতে ১৫০ টাকা, ৩য় শ্রেণিতে ১০০ টাকা, ৪র্থ শ্রেণিতে ৫০ টাকা) প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকির উদ্যোগ নিতে হবে। একই তারিখে একই সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।
মানববন্ধনে সংগঠনটির আহ্বায়ক শরীফুল হাসান শুভের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মোহাম্মদ রাসেলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখবেন ঢাবি শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারুল হক সনি, ঢাবি শাখার সদস্য সচিব এ আর খোকন, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তা সুলতানা, যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম জনি, সদস্য এসএম ইমনসহ প্রমুখ।
পুলিশি হামলার প্রতিবাদসহ তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা, চাকরিতে আবেদনের ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা করা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদে বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু ল’কমপ্লেক্স (বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যুরাল) স্থাপন করা।
এমএমএ/